ঈদে যারা উপহার তো দূরের কথা, একটি শুভেচ্ছা বার্তাও পাননি তারাই এবার পেলেন ঈদ উপহার। তাও খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেলেন এ উপহার। রোদ বৃষ্টি মাথায় করে যাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জলে ভাসা শ্যাওলার মতো, তারাই আজ দু’শতক জমিরসহ পাকা বাড়ির মালিক। মুজিববর্ষের এমন ঈদ উপহার পেয়ে খুশির অশ্রs ঝরেছে ভূমিহিনদের মাঝে।
উপকারভোগীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তারা ভার্চ্যুয়াল পর্দায় না, দেখতে চান তাদের নিজের বাড়িতে। যে বাড়ি প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছেন তাদেরকে। এক সময় নিজের বাড়ি ছিল না বলে কাউকে আসার কথা বলতে সংকোচ বোধ করতেন এসব মানুষ। এখন নিজের বাড়িতে তারা নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
তাদের এই সুখানুভূতির বহিঃপ্রকাশ ছুঁয়ে যায় গণভবণে অবস্থান করা প্রধানমন্ত্রীকে। তেমনি যশোর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপস্থিত জেলা প্রশাসকসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যদেরও। যশোর জেলায় তিনশ’ ১৮টি ঘর পাওয়ার আবেগ তাড়িত করে সবাইকে। মুজিববর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না এমন ঘোষণার পর থেকে চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন সবার কাছে স্বপ্ন পূরণের সুখ প্রকল্পের নাম।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে সারাদেশে ৩২ হাজার নয়শ’ চারটি ঘর হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। শতভাগ ঘরও দেব। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। একটা ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে তখন সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটাই তো চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা এবং সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ৪শ’ ৯২টি উপজেলা যুক্ত ছিল এই অনুষ্ঠানে। ভিডিও কনফারেন্সে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজিগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মুনিম লিংকন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সবুর হেলাল, আফজাল হোসেন দোদুল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎসনা আরা মিলি ও আনোয়ার হোসেন বিপুল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মিকাইল ইসলাম।
ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, দু’শতক জমিসহ পাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় যোগ করলে বোঝা যাবে এক একটি উপহারের মূল্যমান। যশোরে আশ্রয়ণের অনেক জায়গা আছে, যার প্রতি শতকের বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা বা তারও বেশি। আগে ঈদে অসচ্ছলদের মধ্যে সেমাই চিনি বিতরণ করা হতো এখন দু’শতক জমিসহ আধা পাকা বাড়ি উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে। অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটা তার অন্যতম সূচক।
যশোর জেলায় তৃতীয় ধাপে ছয়শ’ ১০টি ঘর নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপে হস্তান্তর করা হলো তিনশ’ ১৮টি ঘর। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৮১, বাঘারপাড়ায় পাঁচ, অভয়নগরে ২৮, মণিরামপুরে ৪৮, কেশবপুরে ৬১, ঝিকরগাছায় ৪১, চৌগাছায় ৪৮ ও শার্শায় ছয়টি ঘর হস্তান্তর করা হয়।
দু’শতক জমির দলিল, নামজারির খতিয়ানসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনের ছাউনিযুক্ত দু’ কক্ষ বিশিষ্ট থাকার ঘর, রান্নাঘর, টয়লেট ও ইউটিলিটি স্পেসসহ প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পেয়ে হাটবিলার ভ্যানচালক দম্পত্তি নিজাম উদ্দীন-আলেয়া বেগম, নরেন্দ্রপুরের কাঞ্চনবালা-রণজিৎ দাস, চাউলিয়ার শারমিন আক্তার, তাসলিমা বেগম, আয়রা খাতুন, শিরিনা বেগমদের মুখের হাসিই বলে দেয় এই প্রাপ্তি তাদের জীবন কতটা বদলে দিয়েছে।
এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যশোর সদর উপজেলায় চারশ’ ৬০, বাঘারপাড়ায় ৫৯, অভয়নগরে ৬৫, মণিরামপুরে দুশ’ ৯২, কেশবপুরে একশ’ ১০, ঝিকরগাছায় ৩৩, চৌগাছায় ৩৫, শার্শায় একশ’২৭ মিলে মোট এক হাজার একশ’ ৮১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন (ক) শ্রেণিভুক্ত পরিবারের সংখ্যা দু’হাজার তিনশ’ ৯৩টি। যার মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচশ’ ৪৯, বাঘারপাড়ায় একশ’ ১৩, অভয়নগরে একশ’ ১১, মণিরামপুরে ছয়শ’, কেশবপুরে দুশ’৪০, ঝিকরগাছায় দুশ’৬৩, চৌগাছায় দুশ’ ৩০ ও শার্শায় দুশ’৮৭। পর্যায়ক্রমে সবাই এই সুবিধার আওতায় আসবেন।