মে দিবস, সাপ্তাহিক ছুটিসহ গত বছর ঈদুল ফিতরের বন্ধ ছিল টানা ছয় দিন। ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন ঐচ্ছিক ছুটি থাকায় সব মিলিয়ে বন্ধ হয়ে যায় ৯ দিন। ঈদের আগেই টানা চার দিন ছুটি থাকায় যাত্রীদের ধাপে ধাপে গ্রামে যাওয়ার সুযোগ ছিল। তবে দুই মাস পর ঈদুল আজহার ছুটি কম থাকায় সেই যাত্রা ছিল ভোগান্তির; বিপত্তি আরও বাড়ায় বৃষ্টি। এবার শুক্র-শনিসহ ঈদের ছুটি মাত্র তিন দিন। অল্প ছুটি আর বৃষ্টি এবার ভোগাতে পারে ঈদে গ্রামমুখো যাত্রীদের।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতর হওয়ার কথা। এর আগের দিন শুরু হবে ছুটি। সেদিনই নামবে ঈদযাত্রার ঢল। অনেক যাত্রী একই দিন একসঙ্গে গ্রামমুখো হলে ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয় হতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করা পদ্মা সেতু এবং ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে যাওয়ার বিকল্প পথ না থাকায় এবারও ঢাকা ছাড়তে যাত্রীদের যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে যানজটে পড়তে হবে। রাজধানীর অন্য দুই প্রবেশপথ গাবতলী সেতু ও টঙ্গীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজও হতে পারে বিপত্তির কারণ।
গত বছর ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। তবে এবার এখনও এ বিষয়ে নির্দেশনা আসেনি। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, গতবার নিষেধাজ্ঞা দিয়েও মোটরসাইকেল ঠেকানো যায়নি। বঙ্গবন্ধু সেতুতে দেখা দেয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। তাই এবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব নেই।
ছুটি বাড়িয়ে ঈদযাত্রায় চাপ কমাতে কয়েক বছর আগেই প্রস্তাব গিয়েছিল মন্ত্রিসভায়। তা অনুমোদন করেনি সরকার। এবার ছুটি বাড়বে, তেমন সম্ভাবনাও নেই। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সমকালকে বলেছেন, ছুটি বাড়ানো প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। সরকারপ্রধানকে পরিস্থিতি জানানো হবে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার উপায় খুঁজতে গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল মিয়ার সভাপতিত্বে সভা হয়েছে সরকারপ্রধানের কার্যালয়ে। গত সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ও আলাদা সভা করেছে। সব যাত্রী এক সময়ে পথে নামলে যানজট সৃষ্টি হয়। তাই সভাগুলো থেকে ঢাকার প্রবেশপথের শিল্পকারখানায় ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি ছুটি বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব এসব সভা থেকে আসেনি।
গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএর সভায় জানানো হয়, সড়ক-মহাসড়কের ৩৮ পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। সচিব আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এই পয়েন্টগুলোতে যানজট ঠেকাতে পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে (সওজ) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সড়কে সমস্যা থাকলে ঈদের আগে মেরামত করবে সওজ। চলতি চৈত্র মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে অকাল বৃষ্টি। এতে সড়ক বেহাল হয়ে যানজটের শঙ্কা বাড়লেও সচিব বলেছেন, ‘প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত নেই।’
সওজের মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (এইচডিএম) বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশে ২ হাজার ৭৭ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ভাঙাচোরা, যা দেশের সড়ক-মহাসড়কের ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৫৭ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ, চলাচলের অযোগ্য। ৭৬ শতাংশ মহাসড়কের অবস্থা ভালো।
খারাপ সড়কের মেরামত বৃষ্টির কারণে টেকসই হবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এ বিষয়ে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে খানাখন্দ রয়েছে। বৃষ্টিতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, খুলনা ও যশোরমুখী সড়কেও খানাখন্দ রয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে গাড়ির গতি কমে যানজট হতে পারে।
গাড়ির চাপ বাড়লে প্রায় প্রতি শুক্র ও শনিবার যানজট হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অংশে একটি গাড়ি বিকল হওয়ায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হয় ওই মহাসড়কে। নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে মহাঅষ্টমীর স্নানের উৎসবের ভিড়ে গত মঙ্গলবার রাত থেকে টানা ৩২ ঘণ্টা মহাসড়কটিতে ধীরগতি এবং থেমে থেমে যানজট ছিল। ঢাকা-নোয়াখালী সড়কের হিমাচল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব উদ্দিন মাসুদ বলেন, ঈদে গাড়ি ও মানুষের চাপ আরও বাড়বে। তাই যানজটের শঙ্কাও বেশি।