ইসলাম এর মৌলিক পরিচয় ইসলাম (الإسلام) অর্থাৎ আত্মসমর্পণ করা এবং বশ্যতা স্বীকার করা, অস্বীকৃতি ও হঠকারিতা পরিপূর্ণরূপে ত্যাগ করা। এরশাদ হয়েছে, وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ অর্থ: তোমরা আত্মসমর্পণকারী হওয়া ব্যতীত মৃত্যুবরণ করো না। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০২ এখানে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হচ্ছে, এক আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, একমাত্র আল্লাহই স্থায়ী, তিনি আদি-অনন্ত, বাকি যা কিছু আছে সবই ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। সব কিছুই শেষ হবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া-এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করতে হবে এবং বশ্যতা স্বীকার করা অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে যে পদ্ধতিতে জীবন যাপন করতে বলেছেন সেই পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন যাপন করা। সর্বশেষ নবী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবনযাপন পদ্ধতিতে যা রয়েছে তাই হল পরিপূর্ণ ইসলাম। আল্লাহ’র রাসূল (সা.) এর জীবন, আচার-আচরণ, চলাফেরা, খাদ্য, বক্তব্য, পোশাক, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, সমাজ, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, হারাম, হালাল সব কিছুর মাঝেই এক আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মসমর্পণ এর বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। রয়েছে পবিত্র কুরআন ও ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশের বাধ্য-বাধকতায় থাকার এক অপূর্ব নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আনুগত্য করা, তিনি যেভাবে সর্বক্ষেত্রে এক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং আল্লাহর নির্দেশিত সীমানা মেনে চলেছেন তাই ইসলাম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সমগ্র জীবনকে এক কথায় ব্যবহারিক কুরআন বলা যেতে পারে। এরশাদ হয়েছে, وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ অর্থ: আপনার পূর্বেও আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম; আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রসূলের কাজ নয়; প্রত্যেক বিষয়ের নির্ধারিত কাল লিপিবদ্ধ। সূরা রা’আদ, আয়াত ৩৮ আরও এরশাদ হয়েছে, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى، إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى অর্থ: আর তিনি নিজের ইচ্ছা মত কথা বলেন না, এটা তো এক ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। সূরা নাজম, আয়াত ৩ ও ৪ উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ থেকে কখনো কিছু বলেননি। যা কিছু আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন ও করেছেন তাঁর সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছার অধীন, এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। সূরা আল-হাক্কাহতে আল্লাহ তায়ালা দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বস্তুর কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রসূলের আনীত। এবং এটা কোনো কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। এবং এটা কোনো গণকের কথাও নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর। এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সুতরাং আয়াতগুলোর মর্মার্থ এই যে, এই কুরআনে বর্ণিত সব কিছুই তাঁর বাণী যা তিনি তাঁর সম্মানিত রাসুল (সা.) মারফত প্রেরণ করেছেন। এটা কোনো কবি বা কাহিনীকারের দ্বারা রচনা করা সম্ভব নয়। আর আল্লাহর রাসুল (সা.) শুধুমাত্র এক আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলেছেন। রসূলুল্লাহ (সা.) এর পর তাঁর উম্মতদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তারা যারা স্বচক্ষে রসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছিলেন এবং তাঁর মুবারাক সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তারা সবাই ছিলেন রসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনাদর্শের অন্যতম উদাহরণ। তাঁদের জীবন ছিলো রসূলুল্লাহ (সা.) এর মহব্বত ও আনুগত্যে পরিপূর্ণ।
পরবর্তীকালে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত ও তাঁর রসূল (সা.) এর দেখানো পথে জীবন যাপন করেছেন, তারা ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদূ আনহু’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। অতএব, সংক্ষেপে এটাই বলা যায় যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার হুকুম, রসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের আদর্শ অনুযায়ী পালন করে চলাকেই ইসলাম বলা হয়। আর ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যার ব্যাপারে অন্যদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
একজন মুসলমানের আচার-আচরণ এমন হওয়া চাই যা দেখে অন্যরা ইসলামের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, মুসলমান ওই ব্যক্তি যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। অর্থাৎ তার কোনো কথা বা কাজের দ্বারা অন্য মুসলমানের কষ্ট অনুভব হবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস ১০। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার তাওফিক দান করুন ও প্রকৃত মুসলমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।
খুলনা গেজেট / এআর