তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ অনুমোদন করতে পারবে না। এখন থেকে সব ঋণই অনুমোদন করবে প্রধান কার্যালয়। ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর বেশি অঙ্কের ঋণের প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটিতে পাঠাতে হবে। আর যে কোনো অঙ্কের আমদানি ঋণপত্র বা এলসির জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে।
চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আহসানুল আলম গত ১৯ জুন অনুষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ওই সভা থেকে সব ঋণ প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি সব শাখা, জোনাল অফিস, উইং ও বিভাগীয় প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন।
এতদিন ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন হতো জোনাল অফিস থেকে। আর যেসব শাখার প্রধান সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের (এসপিও) ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তা, সেসব শাখা থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারত। এসপিও পর্যন্ত পদমর্যাদার কর্মকর্তা শাখাপ্রধান হলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করা যেত। প্রতি পর্যায়ে ঋণ যথাযথভাবে গেছে কিনা তা তদারক করত প্রধান কার্যালয়।
বেনামি ও ভুয়া ঋণসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য প্রকাশের পর থেকে সংকটে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটিকে নানা উপায়ে সহায়তা দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ তারল্য (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি। একটি ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৪ টাকা সিআরআর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি হিসাবে রাখতে হয়। গত জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এর ৪ শতাংশ হারে অন্তত ৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা নগদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকার কথা। তবে গত ২৯ জুলাই ব্যাংকটির চলতি হিসাবে ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির আমানত উঠেছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকায়।
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে টেলিফোন করে পাওয়া যায়নি। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে ফোন এবং সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে বার্তা দিলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ডলার ও তারল্য সংকটের কারণে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর শাখা থেকে ঋণপ্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে কম। যেসব প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে তা অনুমোদন বা বাতিল হয়ে শাখায় আসতে অনেক দেরি হচ্ছে।
শাখায় পাঠানো ইসলামী ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিভিন্ন স্কিম ও কৃষি ঋণের বাইরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত যাবতীয় ঋণ অনুমোদন করবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর স্কিমের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুমোদন করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শাখা, বিভাগ বা জোন। ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে অনুমোদন করবে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটি। আবার যে কোনো অঙ্কের এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেস টু কেস ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। আর সব ধরনের এলসির ক্ষেত্রে ন্যূনতম শতভাগ মার্জিন নিতে হবে। অবশ্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং সরকারি অগ্রাধিকার প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে মার্জিনের শর্ত শিথিল করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বেনামি বা ভুয়া ঋণ ঠেকাতে যদি এমন করা হয়, তা ভালো। ঋণ দেওয়ার আগে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও জবাবদিহির জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে ঋণ অনুমোদন করতে পারে। তবে শাখার ঋণক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সব ঋণ যদি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করা হলে তা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
খুলনা গেজেট/এনএম