ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থেকে প্রায় এক লাখ টাকারও বেশি দামের সাবমারসিবল পাম্প চুরি হয়েছে। বুধবার হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে চুরির ঘটনাটি কবে নাগাদ ঘটেছে এ ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি তারা।
জানা যায়, হলের উত্তর পাশে আড়াই লক্ষাধিক মূল্যের একটি পাম্প ও চুরি হয়ে যাওয়া দক্ষিণ পাশের পাম্পটির মূল্য এক লাখ টাকারও বেশি। দুটি পাম্প-ই হল ভবনের একদম বাহিরে একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। এদিকে হলের দক্ষিণ পার্শ্ব ঝোপঝাড়ে ঢাকা। যেখানে সিসি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো নেই। আলোক স্বল্পতা ও অধিক ঝোপঝাড় হওয়ায় সেখানে আনসাররাও ঠিকমতো ঘুরে দেখে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণপাশে ঝোপের মাঝখান দিয়েই রয়েছে সরু রাস্তা। যেটি লালনশাহ হলের পাশ দিয়ে গিয়ে সহজেই পকেট গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে যাওয়া যায়। লালন শাহ হলের পেছনেও সিসি ক্যামেরা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে হলের অন্যান্য জিনিসিপত্র চুরির আতঙ্কে রয়েছে।
হলের পরিচ্ছনতা কর্মী বিষ্ণু কুমার জানান, গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক এগারোটার দিকে হলের পিয়ন কামরুল হলের দক্ষিণ পাশে যান। এসময় গিয়ে দেখেন ভবনের বাইরে থাকা পাম্পটি নেই। বিষয়টি হলের কর্মকর্তা ও হাউজ টিউটদের জানালে তাদের নজরে আসে।
তিনি আরো জানান, কামরুল লালনশাহ হলের পকেট গেটের দিকে আসার সময় গেটের সামনে একটা নাট পরে থাকতে দেখে। হলের কর্মকর্তাদের নির্দেশে নাটটি নিয়ে এসে মিলিয়ে দেখা যায় নাটটি চুরি হয়ে যাওয়া পাম্পের। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পামম্পটি লালন শাহ হলের পকেট গেট দিয়েই চুরি হতে পারে। লালন শাহ হলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরা চেক করলে হয়তো বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যেতে পারে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারী বলেন, ‘হলের আশেপাশে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো হলের সামনের দিকেই (পশ্চিম পাশে) মুভ করা থাকে। হলের দুই পাশে মুল্যবান জিনিসপত্র থাকলেও ক্যামেরা সেদিকে মুভ করা থাকে না। চুরির ঘটনাটি সামনে আসলে এখন সিসি ক্যামেরার দিক পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ পাশে এখনো কোনো সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি।’
এদিকে হলে চুরি হয়ে যাওয়ার পেছনে দায়িত্বে থাকা আনসারদের ব্যর্থতা বলে দাবি করেন হলের কর্মচারীরা। তারা জানান, প্রতিদিন দুই শিফটে একজন করে আনসার হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। করোনাকালীন সকাল নয়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত হল প্রশাসনের কার্যক্রম চলে। এসময় হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলে অবস্থান করেন।
দুপুর দুইটা থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত একজন ও রাত আটটা থেকে সকাল পর্যন্ত দুইজন আনসার হলের নিরাপত্তায় থাকেন। রাতের বেলায় নিরাপত্তায় থাকা আনসারের গাফিলতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান।
চুরির সন্ধান পাওয়ার আগের দিন রাতে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একা সারা রাত ডিউটি করি। রাত দুইটা পর্যন্ত জেগে থাকি। হলের গেস্ট রুমে বসে থাকি সাথে টহল দেই। কারণ ডিউটি অফিসাররা হঠাৎ চলে আসে দেখতে না পেলে রিপোর্ট করে। পাম্পটা নাকি ৫০ ফিট মাটির নিচে। ওখানে যে পাম্প আছে তা এর আগে কেউ আমাকে বলেনি। সেই রাতে চুরি হয়েছে নাকি আরো আগে তা বলাও মুশকিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, ‘এটার জন্য থানায় জিডি করা হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম