ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর পীর সাহেব চরমোনাই দেশের ৮টি বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ এর ঘোষণা দেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ২১ মে ‘ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্তর’ খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে আজ বুধবার (১৮ মে) সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনটির খুলনার নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল, নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ আজ ভালো নেই। আজ সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছেন না। কারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, গ্যাস সহ সকল নির্মাণসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে কিন্তু প্রতিবাদও করতে পারছে না হামলা-মামলা ও হয়রানির ভয়ে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শতকরা ৯২% মুসলমান ও ৮% অন্যান্য ধর্মালম্বীর দেশ। অথচ এদেশের শিক্ষা সিলেবাসে ইসলাম শিক্ষাসহ সকল ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বিশ্বজাহানের একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং পবিত্র কুরআনুল কারীমে মদের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও হাদিসের মধ্যে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। অথচ বর্তমান সরকার আল্লাহ তা’য়ালার এ বিধানকে উপেক্ষা করে মদের বিধিমালা প্রণয়ন করছে।
এ সকল অন্যায়ের প্রতিবাদে ও গণমানুষের পক্ষে ১৫ দফা দাবি আদায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষিত ১৫ দফা দাবি
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে এবং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে যৌক্তক দাবী সমূহ :
১. যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. দেশে মদ ও সকল ধরণের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিকক্যবাদী সকল ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরী বাদ দিতে হবে।
৬. কারান্তরিণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৭. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৮. সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৯. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।
১০. নির্বাচনে সকল দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরী করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
১১. দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
১৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
১৪. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
১৫. সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুফতী মাহবুবুর রহমান, শেখ নাসির উদ্দিন, আসাদুল্লাহ গালীব, শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, মুফতী ইমরান হুসাইন, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ নোমান, মুফতী আশরাফুল, এস.কে নাজমুল হাসান, মোল্লা রউিল ইসলাম তুষার, শেখ আমীরুল ইসলাম, এইচ এম খালিদ সাইফুল্লাহ, আলঃ আমজাদ হোসেন, আলঃ আবুল কাশেম, ইমরান হোসেন মিয়া, জাহিদুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, মুফতী আব্দুল জব্বার আজমী, মোঃ মঈনুদ্দিন, ইনামুল হাসান সাইদ, মোস্তফা আল গালীব, শরিফুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ মিছবাহ, ইউসুফ গাজী, মোঃ জুবায়ের হোসেন প্রমূখ।
খুলনা গেজেট/ টি আই