পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের ডাকা বিক্ষোভ ঘিরে গতকাল রোববার দেশটিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দলের বেশ কয়েকজন এমপি ও নেতাকে। পিটিআই নেতা-কর্মীদের ঠেকাতে রাজধানীর সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে গতকাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ–সমাবেশে যোগ দিতে গাড়ির বহর নিয়ে কর্মী–সমর্থকদের ছুটে যেতে দেখা যায়।
নির্বাচনী গণরায় চুরি, বেআইনি গ্রেপ্তার এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনীর প্রতিবাদে ১৩ নভেম্বর এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন কারাবন্দী ইমরান খান। গতকালের বিক্ষোভকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
পিটিআইয়ের এই বিক্ষোভকে বেআইনি ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। এর আগে ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত।
ইসলামাবাদের ডি চক এলাকায় জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে গতকাল সেখানে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি বলেন, ‘একটা হলো তাঁদের এখানে আসতে দেওয়া, রাজধানীকে অচল করে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া। আর অন্য বিকল্পটি হলো ইসলামাবাদকে রক্ষা করা।’
এর আগে ইসলামাবাদ ছেড়ে যাওয়ার আগে পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা ও পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুব বলেছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য হলো রাজধানীতে পৌঁছানো। তিনি বলেন, ‘অ্যাবোটাবাদ ও মানসেহরা এলাকা থেকে আমাদের সঙ্গে গাড়িবহর যোগ দেবে।’
খাইবার-পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী হলেন পিটিআই নেতা আলী আমিন গান্দাপুর। পেশোয়ার থেকে গাড়িবহর নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। ওই গাড়িবহরে যোগ দেওয়ার কথা ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির।
এদিকে রাজধানী অভিমুখী পিটিআই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। ফাইজাবাদ ও ইসলামাবাদ এলাকা থেকে ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক করা ব্যক্তিদের মধ্যে পিটিআইয়ের সাবেক নেতা সাদাকাত আলী আব্বাসীও রয়েছেন। ওই দুই এলাকায় পিটিআই নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গুজরানওয়ালা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পিটিআই নেতা-কর্মীদের। সেখানে পিটিআইয়ের জেলা সভাপতি মিয়া আরকামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে পুলিশ। তখন পিটিআই নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান এবং আরকামকে ছাড়িয়ে নেন।
পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে দেশজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হলেও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা অব্যাহত আছে।
ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হলে পাকিস্তানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করতে এর মালিক ইলন মাস্কের প্রতি আহ্বান জানায় পিটিআই। দলীয় ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া পিটিআইয়ের বিক্ষোভের কারণে আজ সোমবার ইসলামাবাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
খুলনা গেজেট/এইচ