প্রায় এক দশকের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পর ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন যুগের ঘোষণা করেছেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ সম্পর্কের নতুন বার্তা নিয়ে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা সফর করেছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে সিমন পেরেজের পর হারজগই প্রথম কোনো ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট, যিনি তুরস্ক সফর করলেন। তার এ সফরে তিনি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন।
আলোচনার পর ক্যামেরার সামনে উপস্থিত হয়ে এরদোয়ান ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের তুর্কি সফরকে তুর্কি-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘মোড় ঘুরিয়ে দেয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক জ্বালানি খাতে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। শিগগিরই তুরস্কের পররাষ্ট্র ও জ্বালানিমন্ত্রীরা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েল সফর করবেন।’
এ সময় এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো পারস্পরিক সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দুই দেশের রাজনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করা।’
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট হারজগ বলেন, ‘এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন আমাদের দুইজনের জন্যই সম্মানের।’
এ সময় উভয় নেতাই স্বীকার করেন যে ফিলিস্তিনিসহ কিছু ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
এরদোয়ান বলেন, তিনি হারজগের সঙ্গে আলোচনায় এ অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে জোর দিয়েছেন এবং তুর্কিরা যে আল আকসা মসজিদের পবিত্রতাকে গুরুত্ব দেয়, সে বিষয়েও হারজগকে অবহিত করেছেন।
তবে হারজগ বলেন, ‘আমাদের শুরুতেই একমত হতে হবে যে আমরা অনেক বিষয়ে একমত হব না।’
এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার পর থেকেই ইসরায়েল বিরোধিতায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান কোনো রাখঢাক রাখেননি। তবে সম্প্রতি দুই দেশ পূর্বেকার বিরোধ ভুলে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছে এবং নতুন করে দুই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই হারজগের সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বরাবরই বলে আসছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতা ও ইসরায়েলের সঙ্গে জ্বালানিসংক্রান্ত বিষয়ে তুরস্কের একই স্বার্থ রয়েছে। এমনকি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটেরও আগ্রহ আছে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য।
এ ছাড়া গত নভেম্বরে তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তর জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের বিকল্প নেই। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংকট সমাধানে সমঝোতার উদ্দেশ্যে আলোচনা হলে মতবিরোধ কমানো সম্ভব।
যদিও এর আগে সব সময় ফিলিস্তিনের সরব সমর্থক তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েল সন্ত্রাসী আচরণ চাপিয়ে দিচ্ছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করে আসছিলেন তিনি।
এ নিয়ে তুরস্ক ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বরাবরই তিক্ত ছিল। বিশেষ করে ২০১৮ সালে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের হত্যার পর দুই দেশই তাদের রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেয়।
পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালে আবারও উফুক উলুতাসকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠায় তুরস্ক।
খুলনা গেজেট/ এস আই