ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের পর অন্তত আরও ১২ দেশে একই দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোতে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ চলছে। তাতে একাত্মতা জানাতেই আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা।
ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে গত ১৭ এপ্রিল বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে দেশটির অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ চলছে।
এরপর বিক্ষোভ শুরু হয় ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত ও লেবাননের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে ও অস্ত্র সরবরাহ করে, এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক ত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন।
এদিকে বিক্ষোভ দমনে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় চলছেই। স্থানীয় সময় শনিবার আরও দুই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে নতুন করে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে চলমান এ বিক্ষোভে দেশটির প্রায় ২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হলো।
চার দেশে নতুন করে বিক্ষোভ
স্থানীয় সময় শুক্রবার জার্মানির বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, অন্য জায়গায় তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভের আহ্বান জানায় তারা। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে জোর করে সরিয়ে দেয়। বিক্ষোভের সমালোচনা করেছেন বার্লিনের মেয়র কাই ওয়েগনার। তিনি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, এই শহর (বার্লিন) যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের মতো ঘটনা দেখতে চায় না।
বিক্ষোভ করছেন সুইজারল্যান্ডের লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি ভবনের ফটক দখল করে আছেন সেখানকার শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষা–সম্পর্কিত যেকোনো কার্যক্রম থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়া ও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে যে বিক্ষোভ করছেন, তাতে সংহতি জানাতেই এমন অবস্থান কর্মসূচি বলে জানিয়েছেন এসব শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভ করছেন ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর (ইউএনএএম) শিক্ষার্থীরা। ইউএনএএম মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ ও ‘নদী থেকে সমুদ্র, ফিলিস্তিন হবে মুক্ত’—এ ধরনের নানা স্লোগান দেন। ইসরায়েলের সঙ্গে মেক্সিকোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও জানাচ্ছেন তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রে ধরপাকড় চলছেই
ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করা ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে শনিবার ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দাঙ্গা দমনের পোশাকে পুলিশ জোর করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নীতি ভঙ্গ করেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে তাঁবু গাড়েন তাঁরা। তবে ক্যাম্পাসে পুলিশ এনে এভাবে জোর করে সরিয়ে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শনিবার আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগো থেকে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। শিকাগো পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অনুরোধ করে। এরপর তারা ক্যাম্পাসে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান চলাকালে অনুষ্ঠানস্থলে মঞ্চের সামনে বিক্ষোভ করেছেন গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে সোচ্চার একদল শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হলেও পুলিশ তৎক্ষণাৎ তাঁদের সরিয়ে নেয়। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করেনি।
গত শনিবার মিশিগান স্টেডিয়ামে বসেছিল মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক ডজন শিক্ষার্থী মাথায় ঐতিহ্যবাহী কেফায়া (ফিলিস্তিনিরা সাদা-কালো যে স্কার্ফ পরেন) আর স্নাতক টুপি পরে মঞ্চের সামনে দিয়ে হেঁটে যান। তাঁদের হাতে গাজায় হামলার বন্ধের দাবি-সম্পর্কিত প্ল্যাকার্ড ও ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়। এ সময় দর্শকসারিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ দেন। তবে পুলিশ দ্রুত বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ফেলে তাঁদের স্টেডিয়ামের পেছনের অংশে নিয়ে যায়।
চলমান শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের মৌসুম। তবে এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল, নয়তো স্থগিত করেছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যেও অনুষ্ঠান আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এইচ