খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ইসরায়েলের ‘ট্রয়ের ঘোড়া’ হলো আমদানি করা সব ডিভাইস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ট্রয়ের বাসিন্দারা প্রতিপক্ষ গ্রিকদের রাখা কাঠের ঘোড়া টেনে নিয়েছিলেন নগর দেয়ালের ভেতরে। সেই ঘোড়ার পেটে ছিল গ্রিসের সৈন্যরা। তারা বের হয়ে পতন ঘটিয়েছিল ট্রয় নগরীর। গ্রিক পুরাণের সেই উপাখ্যানের বিরল আধুনিক ভার্সন দেখা গেল লেবাননে। হিজবুল্লাহর ওপর হামলার অংশ হিসেবে সেখানে নজিরবিহীনভাবে শত্রুরা ঘটিয়েছে হাজার হাজার ডিভাইসের বিস্ফোরণ। এর মধ্যে পেজার, ওয়াকিটকি ছাড়াও রয়েছে নানা বৈদ্যুতিক ডিভাইস। লোকজনের মধ্যে এমনভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তারা মোবাইল ফোন হাতে নিতেও ভয় পাচ্ছেন। এসব ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করছে হিজবুল্লাহ। সেই সঙ্গে দু’পক্ষের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কাও বেড়েছে।

বিস্ফোরিত ডিভাইসের মধ্যে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, এমনকি সৌরবিদ্যুতের ব্যাটারিও রয়েছে। এ অবস্থায় সামনে আসছে নানা প্রশ্ন। ডিভাইসগুলো লেবানন ইসরায়েল থেকে আমদানি করেনি। তাহলে এগুলোতে বিস্ফোরক কীভাবে এলো? এসব ডিভাইস বিস্ফোরণের ঘটনায় তাইওয়ান, জাপান, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরির নাম আসছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পেজারগুলো তাইওয়ান ও ওয়াকিটকি জাপানের কোম্পানি থেকে আমদানি করা হয়েছিল। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই কোম্পানিগুলো দায় নিতে নারাজ। তাইওয়ানের পেজার প্রস্তুতকারক কোম্পানি গোল্ড অ্যাপোলো বলছে, তারা এগুলো তৈরি করেনি; এগুলো হাঙ্গেরির বুদাপেস্টভিত্তিক কোম্পানি বিএসি কনসাল্টিংয়ের লাইসেন্সে তৈরি করা হয়েছে।

জাপানের কোম্পানি আইকম বিস্ফোরক ধারণকারী ওয়াকিটকি নির্মাণের কথা অস্বীকার করেছে। আইকমের পরিচালক ইয়োশিকি ইনোমোতো বলেন, তাদের ডিভাইসে কোনোভাবেই বিস্ফোরক রাখা সম্ভব নয়। তাঁর দাবি, এ ধরনের ওয়াকিটকি এক যুগ আগে উৎপাদন বন্ধ করেছে আইকম।
সূত্র জানায়, এসব ওয়াকিটকির চালান বুলগেরিয়া হয়ে লেবাননে এসেছিল। এ কারণে সেখানে কিছু একটা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, তাদের কোম্পানির যোগসাজশের বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তবে তারা সন্দেহজনক কোনো পেজারের চালান শনাক্তের কথা অস্বীকার করেছেন।

আলজাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়, লেবাননে পেজার-ওয়াকিটকিসহ নানা বৈদ্যুতিক ডিভাইসের ভয়াবহ বিস্ফোরণ কার্যত বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ ঘটনা বিভিন্ন দেশের সরকার ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের গুণগত পরিবর্তনের ঝুঁকিকে সামনে এনেছে। হাজার হাজার ডিভাইসকে এভাবে বিস্ফোরকে পরিণত করার জন্য ইসরায়েল দায়ী বলে মনে করা হয়। এটা নিত্যব্যবহার্য বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রকে অস্ত্রে পরিণত করার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এনেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় টেক কোম্পানিগুলোকে নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় মুখ্য করে তুলেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে লেবাননের রাজধানী বৈরুত। আহতরা আর্তচিৎকার করছেন; অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে হাসপাতালের দিকে। লোকজন এলোপাতাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছেন। একটি ফুটেজে বিস্ফোরণের পর ঘরের জানালা উড়ে গেছে। অনেক স্থানে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। পরপর দু’দিন এসব বিস্ফোরণ ঘটে।

নিউইয়র্ক টাইমসের বর্ণনা অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লেবাননে পেজারগুলো আওয়াজ করতে শুরু করে। কিন্তু এটা হিজবুল্লাহ সদস্যদের কোনো ঊর্ধ্বতন নেতার বার্তা ছিল না। এ বার্তা ছিল তাদের চিরশত্রুর। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে এবং আর্তচিৎকারে রাস্তা, দোকান, বাড়িঘর পূর্ণ হয়ে যায়। প্রতিটি ডিভাইসে মাত্র কয়েক আউন্স বিস্ফোরক সংরক্ষিত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ও একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিস্ফোরণের জেরে মোটরসাইকেলে থাকা আরোহী পথভ্রষ্ট হয়ে দেয়ালে আঘাত হানেন। দোকানে শপিং করতে গিয়ে কেউ কেউ হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের পকেট থেকে বের হচ্ছিল ধোঁয়া। কিন্তু এর চেয়েও বড় ভয়াবহতা অপেক্ষা করছিল। এক দিন পর বুধবার বিস্ফোরিত হতে থাকে শত শত ওয়াকিটকি। বিবিসি জানায়, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এসব হামলা চালিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজে পেজার ও ওয়াকিটকির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে লেবানন কর্তৃপক্ষ।

বৈরুত ছাড়াও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা, হারমেল, বালবেক, সাইদা, নাবাতিয়াহ, নাকৌরা ও মার্জেউন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। দেশটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ওয়াকিটকির ব্যবহার দেখা যায়। লেবাননের এক ইভেন্ট প্ল্যানার জানান, তারা এখন ওয়াকিটকি ব্যবহার করছেন না; হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন।

লেবানন এসব ডিভাইস আমদানির মাধ্যমে যেন পৌরাণিক কাঠের ঘোড়া নিজ দেশে এনেছিল, যা তাদের জন্য চরম বিপদের কারণ হয়েছে। দেশটিতে বিস্ফোরণে দুই দিনে অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। ২৮৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে পেজার বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত ও ২ হাজার ৩২৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ২৫ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৭০৮ জন। এ ঘটনায় লেবাননের মানুষ এখন যে কোনো বৈদ্যুতিক ডিভাইস দেখলে আতঙ্কে কাঁপছেন। তারা এমনকি মোবাইল ফোন হাতে নিতেও ভয় পাচ্ছেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!