খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ

গেজেট ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে অব্যাহতভাবে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের ওপর চলছে দখলদার বাহিনীর বর্বর ও পাশবিক আগ্রাসন। শরণার্থীশিবির, মিডিয়া হাউস, সাধারণ বাড়িঘর কিছুই রেহাই পাচ্ছে না।

ইসরাইলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বড় বড় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে শুরু করে স্পেনের মাদ্রিদ পর্যন্ত; দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে ইরাকের বাগদাদ পর্যন্ত এসব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে হামলা বন্ধের দাবি ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকারীরা ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ নামাঙ্কিত পতাকা নিয়ে ‘ইন্তিফাদা বা গণজাগরণ দীর্ঘজীবী হোক’ বলে এ সময় স্লোগান দেয় তারা। বেশিরভাগ মানুষকে এ সময় ‘ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি’ ছাড়াও নানা প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। তবে কোনো শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে রাজধানী দোহায় কাতারের জাতীয় মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের কাতার, ফিলিস্তিনি ও নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে সংহতি জানাতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা স্লোগানে স্লোগানে ইসরাইলি বাহিনীর অবৈধ ও অমানবিক আচরণ এবং হামলার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি ভালোবাসা ও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।

এমনকি তারা আল-আকসা মসজিদের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণাও দেন। তারা গাজায় ইসরাইলি হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসাবে আখ্যা দেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহতভাবে ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে শনিবার জার্মানিজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানী বার্লিনসহ ফ্রাঙ্কফুর্ট, লাইপজিগ, স্টুটগ্রার্ট, মিউনিখ, হামবুর্গ, কোলন, হ্যানোভার ও হিল্ডেসহাইম শহরে কয়েক হাজার মানুষ এই প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন। এ ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে বড় বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা এবং জেরুজালেমে বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লন্ডনে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক লাখ মানুষ।

শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অংশ নেন। শনিবার সকাল ১১টা থেকেই সেন্ট্রাল লন্ডনের মার্বেল আর্চ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।

‘ইসরাইল বের হও’ এবং ‘ফিলিস্তিনের জন্য স্বাধীনতা’সহ নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভকারীরা হাইড পার্ক হয়ে লন্ডনের ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে এসে সমাবেশ করে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। তবে সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আদালতও বিক্ষোভের বিরুদ্ধে একটি নির্দেশ জারি করেন।

বিক্ষোভ আয়োজনকারীরা বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে আমাদের নীরব করে দেওয়াকে প্রত্যাখ্যান করি। বিক্ষোভ প্রদর্শন করা থেকে আমাদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’ পরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন।

প্যারিস ছাড়াও লিওঁ, বোর্দো, মার্সেইসহ ফ্রান্সের অন্যান্য শহরে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন মানুষ। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস দেশটিতে। এ ছাড়া ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইহুদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস ফ্রান্সে।

শুক্রবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়। দেশটিতে ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। সেখান থেকে তিন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে ড্যানিশ পুলিশ।

এএফপি জানায়, গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্নে বিক্ষোভ হয়েছে। সিডনিতে টাউন হলের সড়কগুলোতে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেয় তারা।

মেলবোর্নে ভিক্টোরিয়া স্টেট লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী। মিছিল নিয়ে তারা পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত যান। বিক্ষোভকারীদের অনেকে ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কোপেনহেগেনে ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন চার হাজার মানুষ। একপর্যায়ে দূতাবাসের দিকে পাথর ছুঁড়তে থাকে বিক্ষোভকারীদের একাংশ।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের ওপরও পাথর নিক্ষেপ করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে।

এদিকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় হতাহতের জন্য দশটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছে মিসর।

বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিওতে। শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন টোকিওর শিবুইয়া এলাকায় ফিলিস্তিনের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে ওই বিক্ষোভ মিছিল হয়।

জুমার নামাজ শেষে শিবুইয়া এলাকার একটি মসজিদ থেকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং ইসরাইলের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জাপানিরা ওই মিছিলে অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রিডম ফর গাজা’ এবং ‘প্রোটেক্ট প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড লেখা নিয়ে শিবুইয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!