ইমারত নির্মাণ আইন ভঙ্গ করে খুলনা আটরা শিল্পাঞ্চলে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র অনুমতি ছাড়াই পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। মো: জিয়াউদ্দিন নামে ঐ প্রকৌশলী বর্তমানে সাতক্ষীরায় কর্মরত। বিষয়টি কেডিএ’র গোচরিভূত হওয়ার পর নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ এবং শোকজ করা হয়েছে তাকে।
কেডিএ’র সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ কেডিএ পরিদর্শক মোঃ মাহাবুবুর রহমান সরেজমিন পরিদর্শনে যেয়ে খুলনার আটরা শিল্প এলাকায় ঐ অননুমোদিত নির্মাণ কাজের বাস্তব চিত্র দেখেন। তারই আলোকে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার স্বাক্ষরিত পত্রে প্রকৌশলী মো: জিয়াউদ্দিনকে শোকজ করা হয়। উক্ত পত্রে উল্লেখ করা হয়, আপনি ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিবদ্ধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা খেলাপ করে খুলনা জেলার খানজাহান আলী থানার অন্তর্গত গিলাতলা মৌজাধীন ভূমিতে অথরাইজড অফিসারের বিনা অনুমতিতে ৯০০ বর্গফুট পরিমাপের আরসিসি কলাম বিশিষ্ট নির্মাণ কাজ করছেন- যা উক্ত বিধিবদ্ধ আইনের ধারা মতে দন্ডÍনীয় অপরাধ।
কেডিএ’র পত্রে উপরোক্ত অননুমোদিত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে মো: জিয়াউদ্দিনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং নির্মিত অননুমোদিত কাজ ভেঙ্গে ফেলার আদেশ কেন দেয়া হবে না, তা আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও উল্লেখ করা আছে চিঠিতে।
এর আগে নগরীর আটরা শিল্পাঞ্চলে শরীফা প্রিন্টার্স এন্ড প্যাকেজার্স প্রাইভেট লিমিডেট নামের কারখানার বাউন্ডারি ঘেঁষে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিনের পৈত্রিক জমিতে আবাসিক ভবনের অনুমোদনের বাইরে ঝুল-বারান্দা নির্মাণের বিষয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এমএম মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেন।
উক্ত প্রতিবেদনে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা লিখেছেন, স্থানীয় বাসিন্দা মৃত আফতাব উদ্দিন মোড়লের ছেলে জিয়াউদ্দিন মোড়ল গং তিনতলা বাড়ীটি ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ লাইন সংলগ্ন। যেকোন সময়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উক্ত জিয়াউদ্দিন কোন নিয়মকানুন না মেনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তার সংলগ্ন গৃহাদি নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত জিয়াউদ্দিনের নিকট ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন প্রকার তথ্য দিতে অস্বীকার করেন।
অননুমোদিত ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণ কাজের ব্যাপারে কেডিএ এবং স্থানীয় ভূমি অফিসের সরেজমিন প্রতিবেদনে সত্যতা মিললেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো: জিয়াউদ্দিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এর আগে একই বিষয়ে তাকে ফোন করলে তিনি অভিযোগের মূল বিষয়টি এড়িয়ে যান সাংবাদিকের কাছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানার আওতাধীন ৩৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিসমত আলী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, একজন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কত টাকা বেতন পান তিনি ? এত বড় স্থাপনা নির্মাণে তার আয়ের উৎস বৈধ কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে মো: জিয়াউদ্দিন সড়ক-মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যেখানে ভূমিকা রাখেন, সেখানে তিনিই ইমারত নির্মাণ আইন ভঙ্গ করে খুলনা আটরা শিল্পাঞ্চলে কেডিএ’র অনুমতি ছাড়াই পাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না। এটা শুধু নৈতিকতা বিরোধী নয়, বড় ধরণের অপরাধও। এজন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও জোর দাবি জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এ ব্যাপারে কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার মোঃ মুজিবর রহমান বলেন, অননুমোদিত নির্মাণ কাজের জন্য ভবন মালিককে শোকজ করা হয়েছে। তিনি স্বশরীরে এসে বা লিখিতভাবে ঘটনার ব্যাখ্যা দিবেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে কেডিএ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
খুলনা গেজেট / এমএম