খুলনা মহানগরীর ৫নং ঘাট রেলওয়ে কবরখানা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলামের কাছে চিঠি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। আতংকিত হয়ে বিষয়টি তিনি জেলা ইমাম পরিষদ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা চান। সবার পরামর্শে ইমাম বিষয়টি পুলিশকে জানান এবং খুলনা সদর থানায় জিডি করেন।
এ ঘটনার আবারও ইমামকে চিঠি দিয়েছে চাঁদাবাজরা। চিঠিতে পুলিশকে জানানোর অপরাধে আরও ১ লাখ অতিরিক্ত দাবি করা হয়েছে। এবার টাকা না দিলে স্বপরিবারে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিয়ষটি নিয়ে আতংকিত ইমামের পরিবার।
মসজিদের ইমামের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের কাছ চাঁদা দাবির ঘটনা নিয়ে ওই এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। দুর্বল বানানে ও গোছালো ওই চিঠি স্বল্প শিক্ষিত কয়েক ব্যক্তির কাজ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কারা এতে জড়িত, পুলিশও কুল কিনারা করতে পারছেন না। তবে মসজিদের একটি ঘের দখলকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
খুলনা সদর থানা পুলিশ ও মসজিদের মুসুল্লীরা জানান, গত ২১ এপ্রিল জোহরের নামাজের শেষে মসজিদে জায়নামাজের পাশে একটি চিঠি দেখতে পান খাদেম। মসজিদের ইমামকে উদ্দেশ্যে করে লেখা ওই চিঠিতে ১০ দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে বা টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি ছিল চিঠিতে। অজ্ঞাত চিঠি পেয়ে বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানান এবং থানায় সাধারণ ডায়রী করেন মসজিদের ইমাম।
গত ৪ মে সন্ধ্যায় মসজিদে আরেকটি চিঠি ফেলে রেখে যায় কে বা কারা। ওই চিঠিতে পুলিশকে জানানোয় অতিরিক্ত আরও ১ লাখ টাকা এবং এবার টাকা না দিলে পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় চিঠির বিষয়টিও পুলিশ ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে।
রেলওয়ে কবরখানা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে এই মসজিদে ইমামতি করি। আমার কোনো শত্রু নেই। এরশাদ শিকদার যখন ঘাট চালিয়েছেন তখনও এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। পরপর দুই বার চিঠি দেওয়ায় কিছুটা বিচলিত লাগছে।
তিনি বলেন, মসজিদে ৮ হাজার টাকা বেতন পাই, পাশাপাশি ছাত্র পড়িয়ে আমার সংসার চলে। ৫ লাখ টাকা একসঙ্গে জোগাড় করতে আমার ৫ বছর সময় লাগবে। এটা এলাকার সবাই জানে। আমাকে কেন টার্গেট করা হলো বুঝতে পারছি না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসজিদের পাশে রেলওয়ের ৮২ শতক আয়তনের একটি ঘের ইজারা নিয়েছে মসজিদ কমিটি। ঘেরের আয় থেকে বেতন-ভাতাসহ মসজিদের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ইমামও ঘেরটি দেখাশোনা করেন। গত কয়েক মাস ধরে ঘেরটি দখল নেয়ার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। মসজিদের ইমাম ওই এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। ঘের দখলে তাকেই প্রধান বাঁধা মনে করছেন অনেকে। এর জের ধরেও চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। এজন্য কাউকে শনাক্তও করা যাচ্ছে না।
খুলনা সদর থানার ওসি কাজী কামাল হোসেন বলেন, দুর্বৃত্তরা চিঠির মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে। এজন্য কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় দফা চিঠির পর এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়