পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ বলছে, ইমরান খানকে তার বাসভবনে খুঁজে পায়নি তারা। তাদের এমন বক্তব্যের পরই নিজের বাসভবন থেকে ইমরান খান নেতাকর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সচেতন মহলে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ যে বাড়িতে ইমরানকে খুঁজে পায় না, সেই বাড়ি থেকেই কিভাবে তিনি ভাষণ দেন। তবে কি পুলিশ পিছু হটেছে! এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বাড়ির সামনে একদিকে অবস্থান করছিলেন নেতাকর্মী, সমর্থকরা। অন্যদিকে উপস্থিত ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে শেষ পর্যন্ত তা ঠাহর করা যাচ্ছিল না।
কেউ কেউ বলেন, রাতেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে তাকে।
এই গ্রেপ্তার নিয়ে গতকাল চরম নাটকীয়তা শুরু হয়। তোশাখানা মামলায় বার বার অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সেই আদেশ কার্যকর করতে রোববার লাহোরের জামান পার্কে অবস্থিত তার বাসভবন ঘিরে ফেলে ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব পুলিশ।
তাকে তাদের হেফাজতে নেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা নেয় তারা। কিন্তু নেতাকর্মীদের তীব্র বিরোধের মুখে পুলিশ ব্যর্থ হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ বলেছে, ইমরান খানকে ওই বাসভবনে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার পরপরই ওই বাসা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইমরান খান। এ সময় তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কখনো মাথা নত করবো না। আপনাদেরকেও কখনো তা করতে দেবো না। এ সময় ইমরান খান আরও জানান, ‘জেল ভরো তেহরিক’-এ অংশগ্রহণের জন্য তারা যে অংশগ্রহণ করেছেন, তার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি তাদেরকে জামান পার্কে ডেকেছেন। ইমরান বলেন, আমাকে সমর্থন দেয়ার জন্য আপনাদের ডাকিনি। ডেকেছি ধন্যবাদ দিতে। তিনি আরও বলেন, দেশ এখন যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তা শুধু একটিমাত্র জাতি বা একটি গ্রুপ সমাধান করতে পারবে না। সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে তিনি বলেন, দেশ এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। অর্থনীতি ডুবে গেছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতিতে মানুষ দুমড়েমুচড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, সরকারে থাকতে তিনি যেসব উপহার পেয়েছিলেন তা কেনাবেচা করেছেন বলে মামলা হয়েছে। একেই তোশাখানা মামলা বলা হয়। এ মামলায় ইসলামাবাদ সেশন কোর্টে তিন দফা উপস্থিত হতে বলা হয় তাকে। কিন্তু ব্যর্থ হন ইমরান খান। চূড়ান্তভাবে তাকে অভিযুক্ত করার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। কিন্তু তিনি উপস্থিত না হওয়ায় আদালতের নির্দেশে পুলিশ গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়। ইমরান খানের সরকারে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ফাওয়াদ চৌধুরীর আহ্বানে ইমরানের বাসভবনের বাইরে এ সময় পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)-এর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমবেত হন। তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে থাকেন। ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে গণআন্দোলনের হুমকি দেন। কিন্তু পুলিশ বলেছে, যারা এই গ্রেপ্তারে বাধা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে বিচার হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকার নয়, আদালত দিয়েছে।
এ নিয়ে রোববার ধারাবাহিক টুইট দেয় ইসলামাবাদ পুলিশ। তারা জানায়, লাহোর পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, পিটিআই প্রধান ইমরান খান গ্রেপ্তার এড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা আরও বলেছে, ইমরান খানের রুমে প্রবেশ করে পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট। কিন্তু তিনি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ইমরানকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের নিরাপত্তায় ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিতে চায় ইসলামাবাদ পুলিশ। একই সঙ্গে জানিয়ে দেয় আইন সবার জন্যই সমান। এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে যারাই বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওদিকে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, জামান পার্কে অবস্থিত ইমরান খানের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন পিটিআইয়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। তারা পুলিশকে পিছু হটিয়ে দিচ্ছেন। সামান্য পরে পুলিশ আবারো উদ্যোগ নিয়ে ইমরান খানের বাসার সামনে পৌঁছে যায়। উল্লেখ্য, গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি ইমরান খানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জাফর ইকবাল।
কিন্তু যে বাড়িতে পুলিশ ইমরান খানকে খুঁজে পায় না, সে বাড়ি থেকেই তিনি কিভাবে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ নিয়ে চলছে সরস আলোচনা। এদিন ভাষণে ইমরান খান বর্তমান সরকারের নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা তীব্র করেন। অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকারের নেতারা তাদের সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিদেশে। আর তাতে আইনগত সুরক্ষা দিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কমর জাভেদ বাজওয়া। পিটিআই প্রধান ইমরান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করেন। বলেন, তাকে লক্ষ্য করে ওয়াজিরিস্তানে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়েছিল। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট/ এসজেড