পাসওয়ার্ড না পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভাঙা হয়েছে ইভ্যালির ধানমন্ডি অফিসের দুটি লকার। আদালতের নির্দেশনায় গঠিত বোর্ডের পাঁচ সদস্য এসময় উপস্থিত ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন লকারে অনেক টাকা থাকবে। কিন্তু লকার ভাঙার পর দেখা যায় একটি লকারে টাকা আছে মাত্র ২৫৩০, অন্য লকারে কোনো টাকা নেই। দুই লকারে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ব্যাংকের দেড় শতাধিক চেক বই।
এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
লকার ভাঙার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
তিনি বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুটি লকার ভাঙা হয়। আপনারা সবাই দেখেছেন, সেখানে কী কী পাওয়া গেছে। আমরা অবশ্যই হতাশ। আমরা আশা করেছিলাম, এখানে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা সেখানে মাত্র ২৫৩০ টাকার মতো পেয়েছি।
বিচারপতি মানিক বলেন, প্রথম যে লকারটি ভাঙা হয় সেখানে আমরা পেয়েছি ১০৭টি চেক বই। সেখানে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় লকার ভাঙার পর সেখানেও আমরা অনেকগুলো চেক বই পেয়েছি। যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সই করা পেয়েছি। আর মাত্র ২৫৩০ টাকা পেয়েছি। কতগুলো ইনভেলাপে টাকা ছিল বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো ছেঁড়া। ধারণা করছি সেখান থেকে টাকা বের করা হয়েছে। ভেবেছিলাম জরুরি প্রয়োজন মেটাতেও অন্তত লকারে কিছু টাকা থাকবে। কিন্তু আমরা পাইনি। সে অর্থে আমরা নিরাশ হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা হাইকোর্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বোর্ড। আমরা কী কী করছি, কী কী করব তার জন্য কোম্পানি আইন অনুযায়ী আদালতের কাছে দায়বদ্ধ। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কোনো কাজই করতে পারি না। আদালতের নির্দেশনা হচ্ছে এ কোম্পানিটি দেউলিয়াত্বের দিকে যাবে। তবে কোনো কোম্পানি দেউলিয়াত্বের দিকে গেলে আইন অনুযায়ী কোম্পানির মোট অর্থ ও দেনার মধ্যে সামঞ্জস্য করতে হয়। এরপর পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করার বিষয় আছে।
এখানে দুই ধরনের পাওনাদার রয়েছে। এক ধরনের পাওনাদার হচ্ছে গ্রাহকরা, যারা বিভিন্ন পণ্য অর্ডার দিয়ে টাকা কিংবা পণ্য কোনোটিই পাননি। আরেকটি হচ্ছে এখানকার মার্চেন্ট, যারা এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত। আমাদের বোর্ডের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে যারা গ্রাহক তাদের টাকা পরিশোধ করা, যোগ করেন বিচারপতি মানিক।
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, মহামান্য আদালত এটিও বলেছেন যদি কোনোভাবে কোম্পানিটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সেই সুযোগ থাকলে সেই চেষ্টা করা। আমি সেই নীতিতে এগুচ্ছি। যদি কোনোভাবে কোম্পানিটিকে টিকিয়ে বা বাঁচিয়ে রাখা যায়। সেই নীতি থেকে এখনও আমরা বিচ্চ্যুত হইনি।
তিনি বলেন, আমাদের এখন প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে ইভ্যালি নামক কোম্পানিটির মোট ঠিক কি পরিমাণ অর্থ বা টাকা রয়েছে সেটি বের করা। আমাদের এ বোর্ডের মধ্যে একজন সাবেক চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট রয়েছেন, তিনি খুব ভালো করেই জানেন। তিনি বলেছেন যে এ অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে।
বিচারপতি মানিক বলেন, এখানে হিউজ টাকার ট্রানজেকশন হয়েছে। তাছাড়া ইভ্যালির হাজার হাজার কাগজ বিভিন্ন অফিসে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেগুলো অডিট করতে সময় ও বেগ দুটোই পেতে হবে।
তিনি বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট এ অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানের নাম বলেছিলেন তারা একটি টাকাও কম নিতে রাজি নন। আমরা এটা নিয়ে নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা করেছি, তবে ফল পাইনি। তাই গত সপ্তাহে আমরা আবারও হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি নতুন অডিটর প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার জন্য, যাতে কম পয়সায় ইভ্যালির কত অর্থ রয়েছে তা অডিট করা যায়। আমরা আশা করছি, কম টাকায় অডিট করা সম্ভব হবে। এরপর আমরা আবার হাইকোর্টে যাব।
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, আমরা গত সপ্তাহে খবর পেয়েছি দুটি ব্যাংক- সাউথইস্ট ও সিটি ব্যাংকে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রয়েছে। যেগুলো আমরা উত্তোলন করতে পারব। আদালত সেটি উত্তোলনের নির্দেশও দিয়েছেন। তবে আমরা এখনো সেই টাকা উত্তোলন করিনি। আমরা এখনো নিজেদের পয়সায় চা খাচ্ছি, কাজ করছি। কোম্পানির কোনো টাকা আমরা নিচ্ছি না।
আদালতের নির্দেশে এ কোম্পানির দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩০ জন লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিচারপতি মানিক। এর মধ্যে সাভারের তিনটি গোডাউনের নিরাপত্তায় ১৫ জন আর ধানমন্ডি অফিসে ১৫ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চার জন আছেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কারণ অডিট কার্যক্রমে রসদ দিতে হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই