ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধার আকস্মিক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করা ওই শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যুতে হতবাক হয়েছেন তারা।
শনিবার বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুর্যালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে “রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হোক, মৃত্যুর তদন্ত দীর্ঘায়িত না হোক, তদন্তের নামে প্রহসন দেখতে চাইনা, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই, নওরীনের শেষ বিদায়ে শ্বশুরবাড়ির লোক অনুপস্থিত কেন?, তদন্ত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়কে পাশে চাই, ছাদ থেকে পড়লো নাকি ফেলে দেওয়া হলো? জানতে চাই” ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লা-কার্ড দেখা যায়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘নওরীন নুসরাত এভাবে আত্মহত্যা করতে পারেনা। এর পিছনে কোন রহস্য রয়েছে। যে মেয়েটি আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন, তার দ্বারা এ ধরনের কাজ হওয়া সম্ভব নয়। মেয়েটি ছিল প্রতিবাদ মুখর একটি মেয়ে। তার সবকিছুতেই স্ট্রং ও রুচিশীল ও প্রগতিশীল চিন্ত সবকিছুই তার মধ্যে ছিলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাত্র ১৬ দিন আগে বিয়ে হওয়া একটি মেয়ের কি এমন হলো যে, তাকে ঘরে আটকে রাখা হলো। বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলো। এমনকি বাবা মা জামাইকে ফোন দিয়ে তার বাসায় মেয়ের কাছে যেতে চাইলে ৬টার পর আসতে বলা হলো। এগুলো কোন না কোন রহস্যের অংশ। এইসব রহস্যের উন্মোচন করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার বলেন, ‘মৃত্যুর ২ দিন আগে তার সাথে কথা হয়েছিলো। নওরীনকে আমি সব জায়গায় অনুপস্থিত পাচ্ছিলাম। হঠাৎ তার মা ফোন দিয়ে বললো নওরীন নেই। আমি দেখেছি সে যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো। সেই মেয়ে এভাবে চলে যাবে তা অবিশ্বাস্য। তার বিষয়ে খবর পেয়েছি তা অত্যান্ত ভয়ংকর। সে অসুস্থ ছিলো তাকে সকল ধরণের ওষুধ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি৷ তাকে ঘরবন্ধ করে রাখা হয়। এমনকি ইন্টারনেট কানেকশনও ছিলো বিচ্ছিন্ন। বাইরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছিলো। তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, হুমকি দেয়া হয়েছে। কেনো তাকে এ কাজ করতে বাধ্য করা হলো? যারা আমার মেয়েকে এরকম করতে বাধ্য করেছে তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তাকে দমিয়ে দেয়া হয়েছে, আজ যদি এর বিচার করা না হয় তাহলে আর কোনো নওরীন আসবে না।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) বিকেলে সাভারের আশুলিয়ায় পলাশবাড়ী নামাবাজারের একটি ভাড়া বাসার ছয়তলা থেকে পড়ে নওরীনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। নওরীন তার স্বামী ইব্রাহীম খলিলের সঙ্গে সেখানে থাকতেন। মাত্র ১৮ দিন আগে তাদের বিয়ে হয়। তবে এ মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে বলে অভিযোগ নওরীনের বাবার। তিনি অভিযোগ করেন তার মেয়েকে হত্যা বা আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল