ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সদ্য ভর্তি হওয়া এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী তাহমিন ওসমান ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র। তারই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন সিনিয়র কর্তৃক র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ তার। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাবাকে সাথে নিয়ে রেজিস্ট্রার, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর ও বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্র।
অভিযোগ পাওয়ার পর রোববার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমান ও ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক মিঠুন বৈরাগী।
ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পর ২০২১-২২ সেশনের কিছু সিনিয়র ছাত্র ভুক্তভোগীকে র্যাগিং করেন এবং চরম খারাপ ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় তাকে সাদ্দাম হোসেন হলের বিপরীতে নিয়ে গালিগালাজ ও হয়রানী করেন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাকে আটকে রাখেন সিনিয়ররা।
অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টায় হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। ওইদিন ভুক্তভোগী যেতে দেরি করেন। খেলা শেষে তাকে আবার হয়রানি করেন অভিযুক্তরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস শেষে ভুক্তভোগীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় জিমনেশিয়ামের পাশে। এসময় ভুক্তভোগী কেন অভিযুক্তদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেই নি এজন্য তাকে বকা দেওয়া হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগীর বাবা রেজিস্ট্রার বরাবর মেইল করে ছেলেকে র্যাগিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের কপি প্রক্টর অফিসে প্রেরণ করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
এ বিষয়ে কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, চিঠিটা আমি এখনো পাইনি। রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জেনেছি। চিঠিটি হাতে পাওয়ার পর আগামীকাল থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো।
প্রক্টর ও এন্টি র্যাগিং ভিজিলেন্স কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি ওই শিক্ষার্থীর বিভাগের সভাপতির নিকট পত্র প্রেরণ করেছি। যাতে করে তার ক্লাস-পরীক্ষায় সভাপতিসহ ওই বিভাগের শিক্ষকগণ তার দেখভাল করেন। সহকারী প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে শিক্ষার্থীর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য খোঁজ খবর রাখতে নির্দেশনা দিয়েছি। ইবি থানার ওসিকে পত্র প্রেরণ করেছি যাতে তার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীর বাবা তার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য হলে একটি সিটের বিষয়ে বলেছিলো। ফলে আমরা হল প্রভোস্টকে পত্র প্রেরণ করেছি। হল প্রভোস্ট মিটিং করে আগামীকাল ওই ছেলেকে হলে তোলার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে এক নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এতে গত ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া উচ্চ আদালত থেকে ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে মাইকিং করে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে কেউ র্যাগিংয়ে জড়িত থাকলে কঠোর শাস্তি এমনকি ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়।