ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরিতে শনিবার শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট বিশাল ছাইয়ের স্তুপের নিচে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে বেশ কিছু গ্রাম। এমনকি আগ্নেয়গিরির ছাই বাড়িঘরের ছাদ পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে। এছাড়া ঘন ধোঁয়ার মেঘ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে দেওয়ায় দিনের বেলাতেও আকাশ রাতের মতো ঘন অন্ধকার হয়ে আছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
গত শনিবার শুরু হওয়া এই অগ্ন্যুৎপাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তত ৫৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকে গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন। দেশটির বিপর্যয় মোকাবেলা সংস্থা বিএনপিবি বলছে, অগ্নিদগ্ধদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ইন্দোনেশিয়ার লুমাজাং প্রদেশের অন্তত ১১টি গ্রাম ছাইয়ের নিচে সম্পূর্ণ চাপা পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো গ্রামবাসীদের অনেকেই মসজিদ এবং অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিএনপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৯ শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দম বন্ধ করা ধোঁয়া আর বিদ্যুত সংযোগ পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও অগ্ন্যুৎপাতের পর ঝড়বৃষ্টিতে আগ্নেয়গিরির লাভা ও ধ্বংসাবশেষ মিশে কাদায় পরিণত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কর্মকর্তা তরিকুল হক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ওই এলাকার সঙ্গে নিকটবর্তী মালাং শহরের সড়ক ও সেতু যোগাযোগও অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। খুব দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার বলছে, আগ্নেয়গিরির ছাই জ্বালামুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করা হয়।
এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই ছাই ১৫ হাজার মিটার (৫০ হাজার ফুট) উঁচু পর্যন্ত উঠতে পারে। সেখানকার এক কর্মকর্তা ক্যাম্পবেল বিগস্ বিবিসিকে বলেছেন, বেশিরভাগ বিমান যে উচ্চতায় ক্রুজ করে, সেমেরু আগ্নেয়গিরির ছাই তার চেয়েও ওপরে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, এই ছাইয়ের মেঘ এড়াতে এয়ারলাইন্সগেুলোকে তাদের যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ বিমানের ইঞ্জিনের ঠাণ্ডা অংশে এই ছাই ঢুকলে তা জমাট বেধে যায় এবং তাতে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়াও ছাইয়ের কারণে পাইলটরা স্পষ্ট দেখতে পান না এবং বিমানের ভেতরে বাতাসের মান খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন অক্সিজেন মাস্ক পরা অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে।