খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৪
  বগুড়ায় ট্রাকচাপায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩
  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল
১৩ বছর পর মায়ের মুখে হাসি

ইজিবাইক চালক মফিজুর হত্যায় পাঁচজনের ফাঁসির রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরে ইজিবাইক চালক মফিজুর হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক ফারজানা ইয়াসমিন এ আদেশ দেন। হত্যাকান্ডের ১৩ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষনা হলো। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পিপি আসাদুজ্জামান।

ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর বিশ্বাসপাড়ার মকছেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে ইকতিয়ার বিশ্বাস, মান্দারতলা গ্রামের বাসিন্দা ও মণিরামপুর উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের মৃত হাছিম সরদারের ছেলে খোরশেদ আলম এবং হামিদপুর দক্ষিণপাড়ার জালাল উদ্দিনের ছেলে কাজল, সদর উপজেলার ধানঘাটা গ্রামের বলরাম ঘোষের ছেলে গোপাল ঘোষ ও চাঁনপাড়া গ্রামের মফজেলের ছেলে এনামুল। দন্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন আসামির মধ্যে রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ইকতিয়ার বিশ্বাস, খোরশেদ আলম ও কাজল। বাকি পলাতক দু’জন হলো, গোপাল ঘোষ ও এনামুল।

এদিন রায় ঘোষনা শেষে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বৃদ্ধ মায়ের মুখে হাঁসি ফুটেছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২২ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইজিবাইক চালক মফিজুর রহমান তার হেলপার নয়নকে নিয়ে পুরাতন কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড (মণিহার মোড়) থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। এরমাঝে হামিদপুরে তার হেলপার নয়নকে নামিয়ে তিনি বাড়ির দিকে চলে যান। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৪ জুন সকালে হামিদপুর ময়লাখানার পাশের একটি পুকুর থেকে মফিজুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, মফিজুর ও তার হেলপার নয়ন যখন বাড়ি ফিরছিলেন ঠিক সেসময় একটি নম্বর থেকে মফিজুর রহমানের মোবাইলে কল আসে। কে জিজ্ঞাসা করেছিল নয়ন জানতে চাইলে মফিজুর বলেছিলেন তাকে টাকা দেয়ার জন্য ইকতিয়ার কল করে ময়লাখানার সামনে ডেকেছে। এই বলে সুলতানা ফিলিং স্টেশনের সামনে ইজিবাইক থেকে নেমে যায় মফিজুর। তিনি নয়নকে ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এসময় নয়ন পাশের একটি মেহগিনি বাগানের সামনে ৪/৫জন যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ওই সময়ের পর থেকে নিখোঁজ হন মফিজুর।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, মফিজুর ইজিবাইকের ভাড়ার টাকা পেতেন ইকতিয়ারের কাছে। এছাড়া, গোপালের স্ত্রী সুমিতা হত্যার ঘটনায় মফিজুর হাজতে ছিলেন। জেল থেকে রেব হওয়ার পর গোপাল মফিজুরকে খুন গুমের হুমকি দিয়েছিলেন। মফিজুরের স্ত্রী দাবি করেন ইকতিয়ার ও গোপাল ষড়যন্ত্র করে তার স্বামীকে হত্যা করে মরদেহ পুকুরের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায়।

এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ হত্যাকান্ডের তদন্তের শুরুতেই ইকতিয়ার ও খোরশেদকে আটক করেন। এরপর বেরিয়ে আসে রহস্য। পরে তারা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে অপর তিনজন আসামির নাম। মূলত পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় মফিজুরকে। পরবর্তীতে মরদেহ ফেলে দেয়া হয় ঝুমঝুমপুর ময়লাখানার পেছনের একটি পুকুরে। যা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।

মামলাটি তদন্ত করে কোতোয়ালি থানার এসআই নাসির উদ্দিন আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সোমবার মামলার রায় ঘোষণার দিনে বিচারক পাঁচজন আসামিকেই মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন।

রায় ঘোষণার পর মফিজুরের বৃদ্ধ মা শাহিদা বেগম স্বস্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি ১৩ বছর ধরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার কলিজার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসির রায় শুনেছি। বৃদ্ধ বয়সে আমি তাদের ফাঁসি দেখে যেতে চাই। তাহলেই আমি শান্তি পাবো।

রায়ে সরকার পক্ষের পিপি আসাদুজ্জামান সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে, আসামীপক্ষের আইনজীবীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে মন্তব্য করেন আসাসীপক্ষের আইনজীবীরা।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!