স্থগিত হয়ে যাওয়া ১৬১ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ২০ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইসি বলছে, ভোটকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মাঠে থাকবে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
এদিকে, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে শনিবার মধ্যরাত, অর্থাৎ রাত ১২টায়। এ সময়ের পর নির্বাচনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা আর কেউ কোনো ধরনের প্রচার চালাতে পারবেন না। একই সময়ে প্রচার শেষ হয়েছে ষষ্ঠ ধাপের স্থগিত নয় পৌরসভার ভোটের প্রচারও।
এর আগে করোনা মহামারির কারণে এসব নির্বাচন স্থগিত করেছিল ইসি। তৃণমূলের এ নির্বাচনে যেমন উৎসব বিরাজ করছে, পাশাপাশি শঙ্কাও রয়েছে। ভোট নিয়ে প্রচারে বাধা দেওয়া ও হুমকি-ধামকিসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের। অন্যদিকে ভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে সব নির্বাচনি এলাকায়। যদিও ইসি ভোটারদের অভয় দিয়ে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে রয়েছেন। যেসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটের মাঠে রয়েছেন, সেসব স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পনা করছে ইসি। কারণ, ওইসব এলাকায় উত্তেজনা বিরাজমান। ইসির শঙ্কা, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এসব এলাকায় ঘটতে পারে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে নির্বাচনি এলাকায়। যেসব এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে ভোট নিয়ে উত্তেজনা বেশি। সেসব এলাকা নিয়ে আমাদের আলাদা চিন্তা রয়েছে। এ ছাড়া সব এলাকায় ইসি সতর্ক অবস্থায় থাকবে। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসব ব্যাপারে আমরা ডিসি-এসপিদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি।’
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার অনুষ্ঠিতব্য ১৬১ ইউপির মধ্যে এরই মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অন্তত ৪৫ জন। (সংখ্যাটি ৪৬ হতে পারে, তবে ইসি তা নিশ্চিত করতে পারেনি।) অন্যান্য ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৫৪৫ জন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৯৬৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ছয় হাজার ৩৩৩ জন।
এদিকে নয় পৌরসভার মধ্যে তিনটি পৌরসভায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আর বাকি পৌরসভায় মেয়র পদের লড়াইয়ে রয়েছেন ২৭ জন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। সেই হিসাবে শনিবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া ভোটগ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় জনসভা, অনুষ্ঠান, মিছিল, শোভাযাত্র করা যাবে না।
এদিকে শনিবার রাত ১২টা থেকে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোটের আগের দিন রোববার রাত ১২টা থেকে ভোটের দিন সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ট্রাক ও পিকআপ, লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবাসহ অন্যান্য পরিবহণ চলাচল করতে পারবে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ১১ এপ্রিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় ১ এপ্রিল তা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ২১ জুন ২০৪টি ইউনিনে নির্বাচন হয়েছিল। তখন ১৬৭ ইউপির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। তবে প্রার্থী মারা যাওয়ায় পাঁচটি ইউপি এবং সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে আপাতত ভোট হচ্ছে না। সেই হিসাবে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬১টি ইউপি এবং নয়টি পৌরসভায় ভোট হবে সোমবার। এ ছাড়া নয়টি পৌরসভার সবকটিতে এবং ১৬১ ইউপির মধ্যে ১১টিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার থেকে র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি এলাকায় টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। বিশেষ প্রয়োজনে বিজিবিও থাকবে ভোটের মাঠে। ভোটগ্রহণের জন্য রোববার বিশেষ নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি মালামাল পাঠানো হবে।