পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। এর পরপরই পূর্ব ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে এই ঘটনায় বড় যুদ্ধের আশঙ্কা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
অন্যদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেখানে রুশ সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। মূলত এই দুই অঞ্চলে ‘শান্তি নিশ্চিত’ করতে রুশ সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মস্কো থেকে জারি করা পৃথক দু’টি ডিক্রিতে পূর্ব ইউক্রেনের এই অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিতে কাজ করার জন্য সেনা মোতায়েন করতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন পুতিন।
এদিকে এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শান্তি নিশ্চিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে পুতিনের নির্দেশনার পর দোনেতস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম প্রবেশ করতে দেখেছেন তিনি।
এছাড়া দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে ঠিক কী পরিমাণে রুশ সেনা মোতায়েন করা হবে সেটি অবশ্য ওই ডিক্রি বা অন্য কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে মস্কোর সরকারি ডিক্রিতে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের সদ্য স্বাধীন এই অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি তৈরির অধিকার রয়েছে রাশিয়ার।
সোমবার সিকিউরিটি কাউন্সিলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে পুতিন সিদ্ধান্ত নেন দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করা হবে। রুশ সংবাদ সংস্থার সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আপনাদের সবার মতামত জানলাম। আজই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পরে এক বিবৃতিতে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন জানায়, পূর্ব ইউক্রেনের দুই রুশপন্থি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন পুতিন। অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ দেবেন তিনি। আবার বার্তাসংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের কথা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে জানিয়েছেন পুতিন। কিন্তু টেলিফোন কথোপকথনে দুই দেশের প্রধানই (পুতিনের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে) অসম্মতি প্রকাশ করেছেন।
আর এর মধ্যেই ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন পুতিন। দীর্ঘ ভাষণের পর পুতিন রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষকে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে বলেন।
পাশাপাশি, ইউক্রেনে রুশপন্থিদের বিরুদ্ধে সরকারের সামরিক অভিযান বন্ধ করার কথা বলে পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, রক্তপাতের দায় সম্পূর্ণ ভাবে বর্তাবে ইউক্রেনের ক্ষমতায় থাকা সরকারের ওপরে। আধুনিক ইউক্রেনের সম্পূর্ণ রূপকার শুধু রাশিয়াই।’