দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। যদিও অবশ হওয়া তার ডান পাশের অংশের কোনো উন্নতি হয়নি।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ এ তথ্য জানান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরো সার্জন ও গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন।
তিনি বলেন, আজকে আমরা ইউএনও ওয়াহিদ খানমের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসেছিলাম। আইসিউতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে যে কারণে তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তবে আঘাতপ্রাপ্তির কারণে তার ডান পাশের ক্ষতিগ্রস্ত অবশ অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, ঠিক কতদিন পরে এটি স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তার ডান পাশের অবশ অবস্থা সারাতে ফিজিও ফেরাপি দেয়া হচ্ছে।
তার সেন্স ভালো আছে, তিনি পরিচিত জনদের সঙ্গে কথা বলছেন। এটাকে আমরা বুঝতে পারতেছি যে তিনি জ্ঞানের দিক থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছেন।
শঙ্কামুক্ত বলা যায় কিনা জানতে চাইলে ডা. জাহেদ বলেন, নিউরো রোগীদের ক্ষেত্রে কখনোই শঙ্কামুক্ত বলা যায় না। তবে এটা বলতে পারি যে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে হত্যাচেষ্টার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির কাজের মেয়ে (গৃহপরিচারিকা) জবেদা ও আরসোলাকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাদের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
রবিবার রাতে উপজেলায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। থানা সূত্রে জানা গেছে, আটক দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিনাজপুর ডিবি পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এর আগে শনিবার কাজের মেয়ে জবেদাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
এ মামলায় আরও যাদের আটক করা হয়েছে তারা হলেন- উপজেলার বানিয়াল পালশা গ্রামের খোকা শেখের ছেলে মো. শাহজাহান শেখ এবং চক বাসুনিয়া বিশ্বনাথপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সোহেল রানা। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান আসামি আসাদুলের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম, একই গ্রামের সইমুদ্দিনের ছেলে সুলতান ও ধীরেন্দ্র নাথের ছেলে শ্যামল চন্দ্রকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
জানা গেছে, এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি ওসি ইমাম জাফর। মামলার বাদী ইউএনওর বড় ভাই শেখ আরিফ হোসেন।
এ মামলার প্রধান আসামিরা হলেন, রংমিস্ত্রী নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার। এ দুই আসামিকে ৭ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রধান আসামি আসাদুল হক রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকায় সন্ধ্যায় থাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকেও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। হত্যার উদ্দেশ্যে তারা ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরে আহত বাবা-মেয়েকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।