বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৩০-৪০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ইউএনও নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেন। অন্যদিকে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা করেছে।
এদিকে বরিশাল নগরীতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে মাঠে থাকবে অতিরিক্ত ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ইউএনওর বাসভবনে হামলার পর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিজিবি ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা জোন থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি বরিশালে মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া পিরোজপুর ও পটুয়াখালী থেকে ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসছে।
এর আগে, বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে কয়েক দফা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও আনসারসহ অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি এ হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছে পুলিশ। অপর মামলাটি ইউএনও নিজেই করেছেন।
অন্যদিকে বরিশাল সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে কার ভূমিকা কী ছিল। কেউ যদি ভুল-ভ্রান্তি করে থাকেন, তাহলে তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দোষী ও প্ররোচনাকারীদের শাস্তি হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখনই কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। বরিশালের ঘটনা যে পর্যায়ে গিয়েছিল, এতে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। বর্তমানে বরিশাল শহরে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা নেই। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, ঘটনায় কারও প্ররোচনা ছিল কি-না, তা মামলার তদন্ত শেষে বলা যাবে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, শোকের মাসে পরিকল্পিতভাবে একটি শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা চারটায় নগরের কালীবাড়ি রোডের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন সেরনিয়াবাত ভবনে এই সংবাদ সম্মেলনে মেয়র উপস্থিত হননি। তবে তিনি বাড়িতেই ছিলেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই