যাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব বলেছিল, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলাটি চুরির ঘটনা; সেই আসাদুল হক এই ঘটনায় ‘জড়িত নয়’ বলে দাবি করেছেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের বরখাস্ত এক মালি রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে ডিআইজি দেবদাস শনিবার বলেছেন, এই ব্যক্তিই হামলায় জড়িত। এছাড়া এ হামলার ঘটনায় নৈশ প্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশকে আটক করেছে পুলিশ।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলীর উপর হামলা চালানো হয়। মাথায় হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত ওয়াহিদা এখন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোলের মধ্যে দু’দিন পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, চুরি করতে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল আসাদুল (৩৫)। তার সহযোগী ছিল নবীরুল ইসলাম (৩৪) ও সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮)। আলোচিত এই ঘটনার ছায়া তদন্তে নামা র্যাবও এটাও বলেছিল যে আসাদুল ‘নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার’ করেছেন।
তবে এই ঘটনা নিছক চুরির ঘটনা হিসেবে মানতে আপত্তি জানায় সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সমিতির নেতারা দাবি করেন, ওয়াহিদার উপর হামলা পরিকল্পিত। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়।
নিজেদের তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরে শনিবার ডিআইজি দেবদাস দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন। তিনি বলেন, “ইতিপূর্বে আটক আসাদুল জড়িত নয়।” ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকার আসাদুল এখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। ডিবিই এই মামলার তদন্ত করছে। আসাদুল যুবলীগে যুক্ত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণাও আসে।
বরখাস্ত মালি রবিউল ইসলামকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ডিআইজি দেবদাস। রবিউলের বাড়ি বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে। ডিআইজি দেবদাস বলেন, “রবিউলকে গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের পুকুর থেকে হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। সে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।”
রবিউলের উদ্দেশ্য কী ছিল- তা জানতে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ইতোমধ্যে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরও করেছে। “এই ঘটনার সাথে আর কারা জড়িত আছে কি না, কী কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে।” জানান ডিআইজি।
র্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়া আসাদুলের বিষয়ে রংপুর ডিআইজি বলেন, আসামি আসাদুলকে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন আর মনে করি না। যেহেতু আসাদুল স্বীকারোক্তি দিয়েছিল র্যাবের কাছে কিন্তু এখন আসাদুলকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়াই কেন কারাগারে পাঠানো হলো-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। র্যাবের যিনি কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকষ হিসেবেই জানি। হয়তো এ ব্যাপারে কেউ মিসগাইড করেছে।
হামলার পর ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় র্যাবের হাতে আটক আসাদুল, নবীরুল ও সান্টুকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। চতুর্থজন হিসেবে গ্রেপ্তার হলেন রবিউল।
খুলনা গেজেট/এনএম