খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

গ্রাহকের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে সমিতির সম্পাদক লাপাত্তা

মাসুদুল হক, বাগেরহাট

বাগেরহাট সদর উপজেলার সিএন্ডবি বাজার এলাকায় গ্রাহকদের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার।

গেল এক সপ্তাহ ধরে বিপ্লবের কোন খোজ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। গ্রাহকদের ধারণা স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ভারত চলে গেছেন বিপ্লব। এই অবস্থায় সিএন্ডবি বাজারে থাকা মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিস, সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও জন প্রতিনিধিরা। এদিকে সাধারণ সম্পাদককে খুজে না পেয়ে সমিতির সভাপতি উন্নয়নকর্মী মানিক দাসকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন গ্রাহকরা।

খোজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে সিএন্ডবি বাজার এলাকার মানিক দাস ও বিপ্লব সরকার স্থানীয় কিছু লোকজনকে সাথে নিয়ে মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠান করেন। সিএনন্ডবি বাজারের পরিতোষ দাসের ভবনে অফিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। স্থানীয় সহজ সরল মানুষদের গ্রাহক বানিয়ে দৈনিক, মাসিক ও এক কালীন বিনিয়োগ নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্টানটি। মানিক দাস বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রুপান্তরে চাকুরীরত থাকায় সমিতির অর্থসহ সব ধরণের দেখভাল করতেন বিপ্লব সরকার। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে । এর মধ্যে ৭০ লক্ষ টাকা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া আছে, শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারেও কিছু টাকার মালামাল রয়েছে। তবে দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়াল্টনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু টাকা পাবে। এই অবস্থায় গেল ১৯ এপ্রিল থেকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার পলাতক রয়েছে।

ভবন মালিক পরিতোষ দাস বলেন, মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে আমার নিজের ১০ লক্ষ টাকা এবং আমার দুই বন্ধুর ৮ লক্ষ টাকা রয়েছে। আমার ৯ মাসের ভাড়াও বাকি তাদের কাছে। এই অবস্থায় যে সমিতি চালাত-সমিতির টাকা পয়সা পরিচালনা করতেন সেই বিপ্লব সরকার পালিয়ে গেছে। তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বৃদ্ধ বাবা-মাও ছেলের কোন খোজ দিতে পারে না। বউ আর একমাত্র মেয়েরও কোন খোজ নেই। আমাদের ধারণা গ্রাহকদের টাকা পয়সা নিয়ে সে ভারত চলে গেছে।

কাজী তারেক নামের এক গ্রাহক বলেন, ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিল আমার সমিতিতে। অনেক কষ্ট করে টাকা রেখেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।

জাহিদ হোসেন, সুবর্না দাস, বিমল সাহা, মিতা ঘোষ, হাসান আলীসহ কয়েকশ গ্রহাক এখন হায় হায় করছেন। যে টাকা নিয়েছে সেতো পালিয়েছে, এখন কে টাকা দিবে এই বলে বার বার বিপ্লবকে গালিগালাজ করছেন আকবর নামের এক ব্যক্তি।

নিলয় দাস নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকায় ১৪‘শ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে সমিতিতে ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কি হবে জানি না। যেকোন মূল্যে আমরা টাকা ফেরত পেতে চাই।
সমিতির ম্যানেজোর কাম হিসাবরক্ষক পলাতক বিপ্লবের চাচাতো ভাই অনিক সরকার বলেন, গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে আমাদের কাছে। গ্রহাকদের কাছে আমাদের ৭০ লক্ষ টাকার মত লোন দেওয়া আছে। সমিতি ভালই চলছিল, এই অবস্থায় কেন সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে গেল জানিনা। আমরাতো খুব বিপদে পড়ে গেলাম।

সমিতির মাঠ কর্মকর্তা সবুজ দাস বলেন, দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও এককালীন বিনিয়োগ নিতাম আমরা। সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার যেভাবে বলতেন সেভাবেই আমাদের সমিতি চলত। সভাপতি তেমন আসতেন না। সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে যাওয়ার পরে এলাকার লোকজন আমাদের প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে।

সমিতির ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের পাইকারি সেকশনের দায়িত্বে থাকা কয়রা এলাকার কার্তিক সরকার বলেন, ওয়াল্টনসহ তিন-চারটি কোম্পানির ফ্রিজ, রাইসকুকার, ফ্যানসহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক্স পন্য আমরা পাইকারি বিক্রি করতাম। শতাধিক খুচরো ব্যবসায়ীদেরকে আমরা পাইকারি মাল দিতাম। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার সরকার এসব দেখভাল করতেন। কিন্তু ১৯ এপ্রিল থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। যারা সমিতির কাছে টাকা পাবে তারা স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে এসে আমাদের শো-রুমে তালা দিয়ে গেছেন। এখন আমরা খুচরো বিক্রেতাদের কাছে আমরা যে ৪৬ লক্ষ টাকা পাব তা কিভাবে উঠাব। আবার কোম্পানির লোকরা আমাদেরে কাছে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা পাবে এই টাকা কোথা থেকে দিব। সভাপতি মানিক দাস তো এসব লেনদেনের বিষয়ে কিছুই জানে না। আমার বেতন বন্ধ দুই মাস। এখন কি করব ভেবে পাচ্ছি না।

অন্যদিকে সমিতির কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা ও সঞ্জয় সরকারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

বিপ্লবের সাথে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করে না পেয়ে সিএন্ডবি বাজারের অদূরে বিপ্লবের বাড়িতে যেয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ ঘরে বিপ্লবের বাবা-মাও নেই। সপ্তাহখানেক আগে কোথায় যেন চলে গেছে বলে জানান বিপ্লবের প্রতিবেশীরা।

সমিতির সভাপতি মানিক দাস বলেন, আমি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকুরী করতাম। যার কারণে সমিতির কোন বিষয় আমি দেখভাল করতাম না। বিভিন্ন সময় কোন কাগজপত্রে আমি স্বাক্ষর করতাম মাত্র। সকল টাকা পয়সা ও ম্যানেজমেন্ট দেখাশুনা করত বিপ্লব সরকার। গ্রাহকদের কোন টাকা আমি নেইনি, কোন গ্রাহক আমার কাছে টাকাও দেয়নি। মূলত বিপ্লব সরকার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত করে দেখলে বুঝতে পারবেন এই টাকা তছরুপের ঘটনায় আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বিপ্লবই সব টাকা নিয়ে পালিয়েছে। বিপ্লবকে ফিরিয়ে এনে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!