সাতক্ষীরার আশাশুনির আনুলিয়া মদিনাতুল উলুম বহুমূখি ফাজিল মাদ্রাসায় নাশকতা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি, হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি, চেক জালিয়াতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ব্যাংকের ঋণ খেলাপিসহ অভিভাবক নয় এমন পাঁচজন সদস্যকে অবৈধভাবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে।
অবৈধ এই কমিটি দিয়ে মাদ্রাসার চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য অভিভাবক কবির শেখ বাদি হয়ে গত ১৯ জুলাই আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আশাশুনি সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে (১৬৭/২০২২) মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলার বিররণে ও স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া মদিনাতুল উলুম বহুমূখি ফাজিল মাদ্রাসায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেজিষ্টার মোঃ রেজাউল হক স্বাক্ষরিত ৩ বছর মেয়াদি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ অনুমোদন দেওয়া হয়। আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধান ও নীতিমালা অনুসারে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হলে, ২১ বছরের কম বয়সের হলে, আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্ত ঘোষিত হলে, ঋণ খেলাপি হয়ে থাকলে, মাদ্রাসার কর্মচারী থাকলে, মাদ্রাসার স্বার্থ বিরোধি কোন কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী হয়ে থাকলে তিনি পরিচালনা পরিষদের সদস্য পদে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
কিন্তু মদিনাতুল উলুম বহুমূখী ফাজিল মাদ্রাসার নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জনতা ব্যাংকের আশাশুনি শাখা কর্তৃক বোরো- ২০/১৪-১৫ নং কেসে ঋণ খেলাপি হিসেবে ঘোষিত। কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য ইনামুল হোসেন বরিশাল যুগ্ম জজ আদালত কর্তৃক (মামলা নং- ৩৯/২০১৯) এক বছরের কারাদন্ড ও ৬ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত আসামী। শিক্ষক প্রতিনিধি তৈয়বুর রহমান আশাশুনি থানার রাষ্ট্রদ্রোহি ও নাশকতার অভিযোগে ১২(৫)১৬), ১৮(০৬)১৮) ও ১০(০৯)১৮) নং মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী। অভিভাবক সদস্য আক্তারুজ্জামান সাতক্ষীরা সদর থানার চাঞ্চল্যকর আমান হত্যা ৬১/১১-১২ নং মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী। এছাড়া অভিভাবক সদস্য আবুল খায়ের মোঃ শফিউল হাসানের মেয়ের সুবাদে ২০২১ সালে ভোটার হলেও প্রকৃত পক্ষে তার মেয়ে আলিসা আলভিনা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বিধি মোতাবেক এসব অযোগ্যতা থাকা সত্বেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন করে তড়িঘড়ি একটি কমিটি অনুমোদন করিয়েছেন। এরপরও ওই কমিটি দিয়ে গত ১১আগস্ট জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় শুন্য পদে শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বেআইনিভাবে গঠিত কমিটি দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হলে শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি অধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যক্ষ, অফিস সহকারি, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নৈশ্য প্রহরী ও আয়া পদে ৯জনকে নিয়োগ প্রদানের জন্য পত্রিকায় (৩য় বার) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে এনটিআরসি বরাবর ৭ শিক্ষকের শুন্য পদে নিয়োগের জন্য মাদ্রাসার পক্ষ থেকে চাহিদা প্রদান করা হয়েছে।
অভিভাবক ইউছুফ সরদার জানান, খাতা কলমে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে ফাজিল পর্যন্ত ১৬টি শ্রেণিতে মোট ৪৬৯ জন শিক্ষার্থী থাকলেও মাদ্রাসায় ২১-২২জন শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করে থাকে। অথচ মাদ্রাসায় নিয়মিত বেতনভূক্ত শিক্ষক রয়েছেন ১৯জন। আবার কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি আরো জানান, কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তা আগে থেকেই ঠিক হয়ে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে প্রচার রয়েছে। এলাকাবাসীর একটাই দাবি বৈধ কমিটি নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হোক।
এদিকে, শনিবার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে সরজমিনে মাদ্রাসায় গেলে অভিভাবক ইউছুফ সদারের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রাথমিকের (১-৫) কোন শিক্ষার্থই ক্লাসে ছিল না বা অন্যদিন আদৌ ক্লাসে আসে না। এসময় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৪ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৮ জন, নবম শ্রেণিতে মিনারা খাতুন নামে একজন ছাত্রি ও আলেম পর্যায়ে ৬জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানরত অবস্থায় শিক্ষকদের দেখা যায়।
এবিষয় মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওলিউল্লাহ জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে ৩১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে শিক্ষক আছেন ১৯ জন। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও সহকারি অধ্যক্ষ নেই। ২০২০ সালে একমাত্র পিয়ন রফিকুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করার পর থেকে কোন কর্মচারী নেই, শুধু শিক্ষকরাই আছেন। গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা, আসামী বা কেউ দন্ডিত কিনা তা তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আজ আবহাওয়া খারাপ থাকায় শিক্ষার্থীরা কম উপস্থিত হয়েছে। শিক্ষার্থী কম উপস্থিত হলেও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদে বধি বর্হিভূত সদস্য নিয়ে আদালতে বিচারাধীন মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভাবক সহ সচেতন এলাকাবাসী।