সাতক্ষীরার আশাশুনির আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর বেঁড়িবাধ ভাঙন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী মানুষের মাঝে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশীপ। প্লাবিত এলাকায় প্রতিদিন ৬টি প্লান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সাথে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে ভাসমান টয়লেট।
জানা যায়, গত (৩১ মার্চ) সকাল পৌনে ৯ টার দিকে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার পাশ থেকে প্রায় দেড়’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া ও কাকবসিয়া গ্রাম। এর মধ্যে নয়াখালী গ্রাম সম্পূর্ন প্লাবিত হয়ে পড়ে। বাকি গ্রামগুলোর নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে সহস্রাধিক মানুষ। পানিতে ভেসে যায় হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয় শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি। মিষ্টি পানির আধার পুকুরগুলো নদীর লবণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দেয় খাবার পানির তীব্র সংকট। প্লাবিত এলাকায় ভেঙে পড়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। আনুলিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি এগিয়ে আসেন ফ্রেন্ডশীপ। লবণ পানিতে আক্রান্ত এসব মানুষের সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করে সংস্থাটি।
স্থানীয় বাসিন্দা আতিয়ার রহমান জানান, নদী ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খোলপেটুয়া গ্রামের তীরবর্তী নয়াখালী গ্রাম। এই গ্রামের সব পরিবার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বাঁধ মেরামতের ফলে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি প্লাবিত এলাকাবাসীর। উপকূলীয় এলাকার অভিশাপ লবণ পানির কবলে পড়েছে আনুলিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। গাছপালা, ফসল, পুকুর সব লবণ পানির নিচে। ফলে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। গবাদি পশু খাবারের অভাবে মরার পথে। অনেকে তাই সখের পশুকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র হয়ে পড়ছেন প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা বেড়িবাঁধটি হঠাৎ করে ঈদের দিন ধসে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। পানিতে ভেসে যায় হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয় শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি। জোয়ারের পানিতে লবণাক্ত হয়ে যায় স্বাদু পানির সব জলাধার আর ফসলি জমি।
তিনি আরও জানান, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কয়েক ১০ হাজার। স্থানীয়দের সুস্বাস্থ্য বিবেচনায় সুপেয় পানি সরবরাহ এবং ভাসমান ল্যাট্রিন সুবিধা সুবিধা দিচ্ছে বেসরকারী সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। যা স্থানীয়দের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দিয়েছে। মানুষের এখন বেশি দরকার নিত্যদিনের চাহিদা পূরণ।
ফ্রেন্ডশিপের সিনিয়র ডিরেক্টর কাজী এমদাদুল হক বলেন, আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা অনেকটা আকস্মিক। তাৎক্ষণিকভাবে লবণ পানিতে আক্রান্ত বানভাসী মানুষের জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ। প্রতিদিন ৬টি প্লান্টের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সরবরাহসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সুস্বাস্থ্য চিন্তা করে ফ্রেন্ডশিপ সরবরাহ করছে ভাসমান টয়লেট। এছাড়া খোলপেটুয়া নদী তীরবর্তী এলাকায় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, নীলডুমুর-সহ নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং বেড়িবাঁধ রক্ষায় ম্যানগ্রোভ বনায়ন করে যাচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ।
খুলনা গেজেট/এনএম