খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই

আল্লামা শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, দাবি কওমি শিক্ষক সমিতির

গেজেট ডেস্ক

হেফাজতের আমির ও দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এমন দাবি শুরু থেকে করে আসছিলেন শফিপূত্র মাওলানা আনাস মাদানী। একই দাবী করেছেন মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমীসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক।

এতে তেমন কেউ কান দিয়েছে এমনটা মনে হয়নি। তবে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি এবার তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির শীর্ষ আলেমরাও। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে এসব দাবি করেন আলেমরা।

আলেমদের দাবি, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার জোহরের নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্রদের যে বিক্ষোভ হয়েছে তা বহিরাগতদের উসকানিতে সংঘটিত হয়েছে। এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা কোনোমতে মাদ্রাসার ছাত্র হতে পারে না।
মাদ্রাসার কোন ছাত্র আল্লামা শফিকে অবরুদ্ধ করে মত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে না। এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তারা।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মো. ওয়াক্কাস জোর দাবি জানিয়ে বলেন, আমি পরিষ্কার বলতে চাই, হজরত মাওলানা আহমদ শফী সাহেবের (রহ.) মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। এতে কোনও সন্দেহ নেই আমার। একটি শক্তি হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, যার পরিণতিতে আহমদ শফী সাহেবের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। যেটাকে বলবো অস্বাভাবিক মৃত্যু।

পুরো বিষয়টির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে মুফতি ওয়াক্কাস বলেন, যদি এটি বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে পুরো কওমি অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে। আল্লামা শফীর এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জীবনের শেষ দুই দিনের ঘটনাবলী ও হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে আট দফা প্রস্তাবনা আকারে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব ও ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি নুরুল আমিন, জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মিরপুর পল্লবী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ে (বেফাক) দীর্ঘদিন ধরেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা চলছিল। এ নিয়ে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা নিরসন ও মাওলানা আনাস মাদানীর অপসারণ চেয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর থেকে টানা দুই দিন বিক্ষোভ চলে।

বিক্ষোভের মুখে বৃহ¯পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে আল্লামা শফী স্বেচ্ছায় মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এর আগে বুধবার রাতে আনাস মাদানীকে শিক্ষা সচিব থেকে অব্যাহতিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শূরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভের সময় মাদ্রাসার সব গেট তালাবদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এছাড়া আহমদ শফী, আনাস মাদানী ও আহমদ দিদার কাসেমীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের রুমে ভাংচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে অসুস্থ হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন আল্লামা শফি। আগে থেকে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক জটিলতার কারনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার আজগরি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইন্তেকাল করেন তিনি।

এরপর শফিপূত্র মাওলানা আনাস মাদানী ভিডিও বার্তায় আল্লামা শফিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে দাবি করে বলেন, ছাত্র বিক্ষোভের নামে আল্লামা শফিকে ৩৬ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ সময় টেনশনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর এক ভিডিও বার্তায় মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আহমদ দিদার কাসেমী আল্লামা শফিকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করেন। এ জন্য তিনি হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বাবুনগরী বহিরাগত লোকজন এনে বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চাপের মুখে পড়ে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

 

খুলনা গেজেট /এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!