বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে শুধু ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে দেশে সংকটকে দীর্ঘ করেছে সরকার।
শনিবার (২৪ জুন) বরিশালে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বেলস পার্ক মাঠে বিকেল ৪টায় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে নতুন ভোটার ও তরুণদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের দাবি মেনে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। এরপর আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। শুধু ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে দেশে সংকটকে দীর্ঘ করেছে সরকার।’
‘এই সরকার বৈধ নয়। এরা অবৈধ। তাদের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের স্পষ্ট কথা আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না। এই সরকারের অন্যায় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘনের কারণে কিন্তু র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরা আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে গুম করে রাখে। এজন্যই কী আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আজকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের নতুন সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এরা আমাদের ইলিয়াস আলী, সুমন থেকে শুরু করে ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। তাদের সন্তানেরা এখনো অপেক্ষা করে তাদের বাবা-ভাই ফিরে আসবে। কিন্তু এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের সন্তানদের পিতৃহারা, স্ত্রীদের স্বামীহারা এবং মায়েদের সন্তানহারা করেছে। শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে গত ১৪ বছর ধরে নির্যাতন করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী এই সরকার বৈধ নয়। আজকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিদায়ের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। যার প্রমাণ বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশ।’
তিনি আরো বলেন, “তারা বলে দেশে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তারা বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থী, আলেম মানুষ, তাকে মেরেছে। আর নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তিনি কি মারা গেছেন?’”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের কথা বলে! কিন্তু কোন সংবিধান? সংবিধানে তো বলা হয়েছে দেশের মালিক জনগণ। তারা কি ভোট দিতে পেরেছে? না। দুই প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। অথচ ভোট দেয়া হয় প্রতিনিধি নির্বাচিত করার জন্য। কিন্তু এরা নিজের চুরি করার জন্য সংসদে পাঠায়। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে বলে যে ভোট হয়ে গেছে। কারণ তারা জানে জনমতের প্রতিফলন হলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এত অন্যায় করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজকে সরকার বিদ্যুতের কথা বলে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রকল্প করে টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করা। আজকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার আরাম-আয়েশ করছে। এরা কাগজ-কলম সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। এরা যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে এই অবস্থা চলতে থাকবে।’
‘সরকার আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছে,’ বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই তরুণ সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের সাহস বাড়ে। যেন তরুণ বয়সে ফিরে যাই। যা আমাদের অন্দোলিত করে। আজকে এই ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তারেক রহমানের স্বপ্ন তরুণ প্রজন্মকে দেখাতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তার আগে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান ফারুক, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তানজিল হাসান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
খুলনা গেজেট/এমএম