আওয়ামী লীগ সরকারের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, গণতন্ত্র, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছে। নির্বাচনের নামে দেশের জনগণের সাথে তামাশা ও প্রসহন করেছে। বিরোধী দলের প্রতি দমন পীড়ন, মিথ্যা মামলা ও গুম করেছে। কাউকে ভোট দিতে দেয়নি।’
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘জোরপূর্বক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে কাউকে ভোট দিতে দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। দীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা মানুষের কথা বলার অধিকারকে হরণ করে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একছত্র অপশাসন কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ও খুনি আওয়ামী লীগের পতন ঘটানোর পর বাংলার মাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রকাঠামোকে মেরামত করতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জনে আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই।’
এর আগে নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন-বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান। এ সময় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মাহবুব মুর্শেদ জাপল ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুর রহমান পলাশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান আরো বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি অতীতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বেকারদের প্রবাসে কর্মসংস্থানের সুযোগ, এদেশে রফতানি আয়ের প্রধান উৎস গামের্ন্টসের সূচনা ও কৃষি তথা কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বিএনপি সরকারের আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, কলকারখানা স্থাপনপূর্বক বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু। এছাড়া বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি জুলফিকার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ, যুগ্মসম্পাদক আলী হাসান, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান আলেক, লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহদুজ্জামান বাটু, সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম, কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক স ম ওয়াহিদুজ্জামান মিলু, কালিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি এস এম সেলিম হোসেন, নড়াইল পৌর বিএনপির সভাপতি তেলায়েত হোসেন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফসিয়ার রহমানসহ অনেকে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রকাশ্যে নড়াইল জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭০৭ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। এ সম্মেলনে সভাপতি পদে বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম এবং জুলফিকার আলী মন্ডল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরুল ইসলাম, শাহরিয়ার রিজভী জর্জ এবং কামরুল হাসান প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন টিপু সুলতান, খন্দকার এজাজুল হাসান বাবু, মাহবুব মুর্শেদ জাপল ও এস এম ফেরদৌস রহমান।
রোববার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে দীর্ঘ ১৬ বছরেও প্রকাশ্যে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
খুলনা গেজেট/ টিএ