জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, একটি শক্তি আওয়ামী মার্কা নির্বাচনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা চায়, যেনতেন একটি নির্বাচন করে ক্ষমতার মসনদে বসতে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও সাকিব রায়হানের উত্তরসূরিরা বেঁচে থাকতে এদেশে আর কোন ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের বিআইডিসি সড়কে অবস্থিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কার্যালয় চত্বরে রোববার (১৩ জূলাই) বিকেলে খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-আড়ংঘাটা ও যোগীপোল) আসনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ছাত্র সমাজ; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডরাবাজ, দখলদারদের বয়কট করবে। জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ মুক্ত, বৈষম্যহীন একটি সুখী-সমৃদ্ধ, ইনসাফর্পূণ বাংলাদেশ গড়তে চায়। জামায়াতে ইসলামীর চাওয়া এবং ছাত্র সমাজের চাওয়া একই। তাই ছাত্র সমাজ জামায়াতে ইসলামীর সাথেই থাকবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে ইনশাআল্লাহ। ‘গত ১৭ বছরের প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিরকরণের এই ৭ দফা দাবি ছাত্র-জনতার দাবি’। ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ৭ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হবে, এদেশের ছাত্র সমাজ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন নির্বাচন মেনে নিবে না’। ছাত্র সমাজের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আবারো রাজপথে নামতে হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ছাত্র সমাজ রাস্তায় নামলে দাবি আদায় করে ছাড়বেই, ছাড়বে। বিজয় নিশ্চিত না করে ছাত্র সমাজ কখনো রাজপথ ছাড়েনি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা বিরোধী আন্দোলন ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে হয়েছে এবং ছাত্র সমাজ বিজয়ী হয়েছে। ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার ছাত্র-জনতার আকাঙ্খা বুঝে ৭ দফা দাবি মেনে নিবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ছাত্রশিবিরের দিকে জাতি আশার সঞ্চার রেখে তাকিয়ে আছে, জাতির আশা-প্রত্যাশা পুরনে নিজেদের সুযোগকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানোর জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মহানগরী আমীর বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য প্রত্যেকের ইবাদত-বন্দেগিতে আরো বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। আমল-আখলাকের দিকে উন্নতির পাশাপাশি নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার ভূমিকা রাখার জন্য নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান। জুলাই যোদ্ধাদের জাতীয় বীর উপাধি দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেও ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারেনি। কারণ, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলমত রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে দমন পীড়ন করেছে। কিন্তু ছাত্রদের নেতৃত্বে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। জাতি ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত হয়। ছাত্র-জনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে জীবন ও রক্ত দিয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার সাহসিকতার মর্যাদা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।
মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভেতরে আওয়ামী দোসরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা সরকারের ভেতরে এবং বাইরে নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। দেশ ও জাতিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হবে। রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ফেরাতে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ করতে হবে। প্রশাসনে সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের দায়িত্ব দিতে হবে। তবেই জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করতে পারবে। অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রায় ১ বছর রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকলেও জুলাইয়ের চেতনার প্রতিফলন না হওয়ার অন্যতম কারণ সরকারের ভেতরে আওয়ামী দোসর। জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করতে তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও খুলনা মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি রাকিব হাসানের পরিচালনা বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, বিএল কলেজের সাবেক সভাপতি মুনসুর আলম চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে ইসরাফিল হোসেন, আসিফ বিন আজাদী, সোলায়মান আবিদ, লিমন হোসেন, হযরত আলী, শেখ হোসাইন আহমেদ, জুবায়ের হোসেন, কামরুল হাসান, কাশেম হোসেন, আড়ংঘাটা থানা সভাপতি রায়হান হোসেন প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এসএস