একসাথে ৪১৫টি লাইট জ্বালানোর মধ্য দিয়ে ‘পদ্মার’ আলোয় আলোকিত হল মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্ত। যে আলো ২৫ জুনের পর ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে।
পদ্মা সেতু চালুর পর দেশে বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে কি ধরণের প্রভাব পড়বে, এ নিয়ে খুলনা গেজেটকে মতামত দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন ড. মো: নাসিফ আহসান।
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর চালু হওয়ার পর আঞ্চলিক পর্যায়ে দারিদ্রের হার ১.০১ শতাংশ এবং জাতীয় পর্যায়ে ০.৮৪ শতাংশ হ্রাস করবে। যা দেশের সামগ্রিক দারিদ্র বিমোচনে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
এই সেতু দেশের জিডিপিতে বছরে প্রায় ১.৩ থেকে ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সমাপ্তি হলে, জিডিপি আরও ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া পদ্মা সেতু প্রতি বছর ১৮-২২ শতাংশ বিনিয়োগের অর্থনৈতিক হার (ERR) প্রদান করবে, যা ফিবছর বৃদ্ধি পাবে।
প্রফেসর মো: নাসিফ আহসানের মতে, ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলিতে ভ্রমণের সময়কাল প্রতি ট্রিপে কমে যাবে গড়ে প্রায় ৩ ঘন্টা । এছাড়া সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে রুট-১ এর একটি অংশ হবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য উন্নয়নের দ্বার খুলে দেবে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি সাব-রুটে রূপান্তরিত করবে এবং দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা ও মোংলার মধ্যে দূরত্ব ২৭৪ কিলোমিটার থেকে ১৭০ কিলোমিটারে নেমে আসবে। জাইকা অনুমান করেছে যে, ঢাকা থেকে ভ্রমণের সময় ১০ শতাংশ হ্রাস করে জেলাভিত্তিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে ৫.৫ শতাংশে উন্নীত করবে, যা এই অঞ্চলের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে।
এছাড়া পদ্মা সেতু ঢাকার সাথে মোংলা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেললাইনের সাথে সংযোগ করবে। এর ফলে এসব বন্দর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে সহায়ক হবে। একই সময়ে, সেতুটি মোংলা ও পায়রা বন্দরকে সরাসরি সংযুক্ত করায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর দৈনিক ২১ হাজার ৩০০ যানবাহন এবং ২০২৫ সালের পর প্রতিদিন ৪১ হাজার ৬০০ যানবাহন চলাচল করবে। এক্ষেত্রে সেতুটি প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ লিটার জ্বালানি সাশ্রয় করবে করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ এলাকার জন্য সাতটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল খুলনা ও বাগেরহাটে, দুটি বরিশালে এবং একটি ভোলায় প্রায় তিন হাজার একর জমিতে হবে।
শিল্পায়নের মাধ্যমে প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে কমপক্ষে ১০ লক্ষ লোকের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হবে। শুধু বরিশালে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৩০-৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
এছাড়া সেতুটি কৃষি ভিত্তিক ও অ-কৃষিভিত্তিক উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা, লবণাক্ত অঞ্চলে বৈচিত্র্যময় কৃষি, এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য লাভে সহায়তা করবে। একই সাথে, এটি দুগ্ধ এবং মাছ প্রক্রিয়াকরণ, চিংড়ি এবং পাট ব্যবসাকে বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায়।
খুলনা গেজেট/ এস আই