ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিজেপিকে হারাতে হলে সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে। আমি একা কিছু করতে পারব না। আমি লিডার নই, ক্যাডার। আমি স্ট্রিট ফাইটার।’ বুধবার কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মমতা বলেন, আলোচনা খুবই সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সোনিয়াজি চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, গিয়েছিলাম। দেশের রাজনীতি ও বিজেপিবিরোধী ঐক্য নিয়ে কথা হয়েছে। পেগাসাস-কাণ্ড ও করোনা নিয়েও আলোচনা হয়। আশা করি, ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফল আসবে।
দুই বছর পর রাজধানী দিল্লি সফর করছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে ২০২৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার রূপরেখা তৈরি করতেই তার এই সফর। দিল্লি যাওয়ার আগেই বিজেপিবিরোধী শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। রাজধানীতে পৌঁছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপিবিরোধী দলগুলোকে সুসংহত করতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার এই রাজনৈতিক তৎপরতায় চাঙ্গা হয়েছে বিজেপিবিরোধী শক্তিগুলো। বিরোধী ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এরপর তৃণমূলের সুরে সুর মিলিয়ে শাসক দলের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। সব মিলিয়ে মমতার সফর ঘিরে চাঙ্গা হওয়া বিরোধীদের তোপের মুখে রয়েছে বিজেপি।
তৃণমূলের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপারসন মনোনীত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। বৈঠকে আগামী দিনে সংসদে দলের অবস্থানগত কৌশল কী হবে, তা সাংসদদের বাতলে দেন তৃণমূল নেত্রী। এ সময় পেগাসাস কেলেঙ্কারি ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে পার্লামেন্ট ও বাইরে কঠোর অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
তার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, বিরোধী জোটের মুখ কে হবেন, তা নিয়ে সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিরোধী জোট গঠনকেই এখন অগ্রাধিকার দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে মোদির সঙ্গে গোটা দেশের লড়াই হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা নয়। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিজয়রথ থামিয়ে দেওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য যে বিরোধী দলগুলোর একজোট হওয়া প্রয়োজন- তাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লির ১০, জনপথে সোনিয়ার বাসভবনে তার সঙ্গে বৈঠকের আগের দিন মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কংগ্রেস নেতা কমলনাথ, আনন্দ শর্মা ও অভিষেক মনু সিংভি। কংগ্রেস নেত্রীর সঙ্গে মমতার এ বৈঠককে বিজেপিবিরোধী জোট শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ববহ মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল রাজধানীতে বিজেপিবিরোধী ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধী। সভায় অংশ নেয় কংগ্রেস, শিব সেনা, সিপিআই, সিপিএম, আরজেডি, এনসিপি, এএপি, ডিএমকেসহ আঞ্চলিকভাবে প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এতে প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা করেন নেতারা। বৈঠক শেষে রাহুল বলেন, পেগাসাস কেলেঙ্কারি তদন্তের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পার্লামেন্ট ঠিকঠাক চলতে দেওয়া হবে না। তথ্যসূত্র :এনডিটিভি