” মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না “
আজকে কেনো জানি না কবিতার লাইনগুলোর কথা মনে পড়ছে।
মায়ের কোলে বসে নিজের মাতৃভাষা আধো আধো বুলিতে বলতে শেখা। মা মা বলে নিজের মাকে ডাকতে শেখা,সেসব দিন ছিল কতই না মধুর।অথচ বর্তমানে মায়েরা আধুনিকতার দরুন তাদের বাচ্চাকে মম বলতে শেখায়।বাচ্চা যদি ইংলিশে কথা না বলে তাহলে তার সমাজে না কি মান থাকে না।বড়ই হাস্যকর!
সময় চলমান আর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের চারপাশের পরিবেশ আর পরিবেশে থাকা মানুষ গুলো।
হ্যালো,হাই বা গুড মর্নিং দিয়ে শুরু হয় আমাদের কথা বলা। আর শেষ হয় বাই বা গুড নাইট দিয়ে।আজ আমরা ভুলে গেছি শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি বলতে।নিজের সম্মানকে ধরে রাখার জন্য আমাদের কথার মাঝে সবসময় ইংরেজির ভাজটা বাংলার থেকে অনেকটাই বেশি। আমাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হবে না যে আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা।
ইংরেজরা তো কবেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু তাদের ইংরেজি ভাষা,তাদের আদবকায়দা,পোশাক, খাবার সবকিছুর বীজ বুনে দিয়েছে এই বাংলায়।
আমরা বাঙালিরা বড্ড বেশি হুজুকে মাতাল।সেটা নিজেকে নিয়ে নয় বরং অন্যকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবি।আমাদের এত মিষ্টি ভাষাকে ভুলেছি, ভুলেছি পরতে শাড়ি, ভুলেছি বাঙালিয়ানা সকল রান্না।ওয়েস্টার্ন ড্রেসের প্রতি আমাদের দুর্বলতা। আর চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল হলে তো কথাই নেই।
তবে হ্যা, সময়ের সাথে একটু আমাদের ভোলটাকে পাল্টাই। যেমন, পহেলা বৈশাখে পান্তা আর লাল পাড়ে সাদা শাড়ি, খোলা চুল, কপালে একটা লালটিপ সাথে রমনার বটমূল।আবার, একুশে ফেব্রুয়ারিতে কালো পোশাক, দুহাত ভরতি ফুল নিয়ে কোনো এক শহীদ মিনারে সারাটা দিন অনেক কষ্টে ইংরেজিটাকে বাদ দিয়ে বাংলায় কথা বলা। মা দিবসে মায়ের প্রতি ভালোবাসাটা আবার আমাদের অনেক বেশিই বলা চলে।
দিন চলে যায় সাথে নিয়ে যায় আমাদের খোলসের মধ্যে আবৃত থাকা এক একটা রুপকে।নতুন দিনের সাথে প্রকাশ পায় আমাদের নিত্য নতুন রুপ।
“আমরা মনে প্রাণে বাঙালি বটে।
বাইরে কিন্তু ইংরেজি বাবু ষোল আনা।
ইংরেজি টুকু না থাকলে যায় না সমাজে চলা।”
বলি ও মসাই এই ভাবে আর কতদিন??
এই বার তো বলুন, আমি বাঙ্গালী, আমি গর্বিত, আমি বাঙ্গালী।
খুলনা গেজেট/এমএম