বাংলাদেশের কোন এয়ারপোর্টে যাবার আগেই আমার সৌভাগ্যক্রমে ভারতের এয়ারপোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ হয়েছে। প্রথম যেবার কোলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস এয়ারপোর্টে গেলাম, ১৬৪১ একরের উপরের দাঁড়ানো ভারতের সবচেয়ে পুরাতন সুবিশাল এই বিমানবন্দরটির চাকচিক্য দেখে বিমোহিত হয়েছিলাম। এরপর বিভিন্ন সময় ইন্দিরা গান্ধী, চেন্নাই ইন্টারন্যাশনাল, শেইখ-উল-আলমসহ কয়েকটি এয়ারপোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ হয়েছে। এদের প্রত্যেকটাই উপমহাদেশের স্ট্যান্ডার্ডে বেশ ভাল মানের। পরবর্তীতে যখন আমাদের দেশি বিমানবন্দরে যেতে হল, প্রচণ্ড হতাশ হলাম। এটা জানা কথা যে আমাদের এয়ারপোর্টগুলোর ম্যানেজমেন্ট ও সার্ভিস খারাপ, কিন্তু এখানে নুন্যতম যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার থাকার কথা তাও আমাদের নেই। বিমানবন্দর একটা দেশের আভিজাত্যের প্রতীক। এখান দিয়ে দেশ-বিদেশের পলিসি মেকাররা যাতায়াত করে। তাই অবতরণের ইমিডিয়েট পরেই দেশটার সম্পর্কে তাদের মনে একটা ধারণা জন্মে। সেই কারণে এয়ারপোর্ট আবশ্যিকভাবে বেস্ট-ইন-ক্লাসের হতে হবে। প্রবেশপথ থেকে শহরের কানেক্টিং রাস্তা উন্নত, প্রশস্ত ও জ্যাম-ফ্রি থাকতে হবে। সেখানে আমাদের অবস্থা কি?
একই কথা রেলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পাশের দেশ সেই কবেই রেলের উপর ভর করে পুরো দেশকে পরিবর্তন করে ফেলেছে আমরা তখন এই খাতে প্রতিবছর লোকসান গুনি। অথচ রেলনির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে আমাদের খরচ ও ক্লান্তি দুটোই কমতো। সারা বিশ্ব যখন ব্রডগেজের দিকে টার্ন করেছে, আমরা আছি মিটারগেজ নিয়ে। টিকেট বুকিং দালাল ছাড়া পড়ায় অসম্ভব। স্পিড, টাইম ম্যানেজমেন্ট আরো মাশাল্লাহ। আমাদের কি গর্ব করার মত একটা বিশ্বমানের রেল স্টেশন আছে? নাই। রেলও বাদ দিলাম। আমাদের কি ভাল মানের বাস সার্ভিস আছে? নাই। থাকবে কিভাবে? রাস্তা তৈরি করার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পিচ উঠে আসে। ভাল মানের গাড়ি ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণ দুটোই একারণে আমাদের কাছে আকাশ-কুসুম কল্পনা।
শুধু কি তাই? যেখানে অফিস করতাম সেই একাডেমিক ভবনটাও নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে। ওই ভবনে বেশ কিছু রুমে একটু জোরে হাঁটলে বিল্ডিং কাঁপে। পরে কিছু মেরামত হয়েছে, কিন্তু এখনো সেখানে ক্লাস নিতে গেলে মনের মধ্যে সংশয় কাজ করে। ভবনের দেয়ালগুলো মাটির ঘরের দেয়ালের মত বাঁকা-ত্যাড়া। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র হলে ‘গণরুম’ নামে এক মানবেতর ব্যবস্থা আছে যেখানে অনেকে গাদাগাদি করে একসাথে শোয়। বাথরুমগুলো নোংরা ও দুর্গন্ধময়। ক্যান্টিনগুলোর কথা আর নতুন করে কি বলব। এরকম মানহীন, স্বাদহীন খাবার বিশ্বের আর কোথাও স্টুডেন্টদের সার্ভ করে দেখিনি। বাইরের দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষাভবন দেখলে কেবলই আফসোস হয়। একেকটা যেন স্টেট অব আর্ট। সবকিছু দেখে আমরা দিনরাত উন্নয়নের যে ভাঙ্গা রেকর্ড শুনি তা আমার কাছে তামাশা মনে হয়। আমি দুঃখিত। ( ফেসবুক ওয়াল থেকে )।
খুলনা গেজেট/ টি আই