২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীজুড়ে সংগঠনের নেতাদের গণগ্রেপ্তার চলছে। বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি চলছে পুলিশের অভিযান। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ ৩৩ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযান চালানো হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ডি/২০৩ নং বাসভবনে। এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সদস্য সাইদুর রহমান মিন্টু।
আমিনুল হক বলেন, রাত সাড়ে আটটার সময় আমার পল্লবীর বাসায় পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে। বিল্ডিংয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় পুলিশ। যাতে সিসি ক্যামেরায় সেই ফুটেজ ধারণ না করা যায়। বাসা তালাবদ্ধ ছিল। তালা ভেঙে বাসার ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র তছনছ করে পুলিশ। এর আগে সন্ধ্যা থেকে বাড়ি ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। প্রায় দেড়ঘণ্টা এ অভিযান চালায়। আমি নিরাপদ স্থানে আছি।
ছাত্রদল নেতা শ্রাবণকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ : এদিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিখিল চন্দ্র শ্রাবণকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। গভীর রাতে বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, সন্ধ্যায় নিখিল চন্দ্র শ্রাবণকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৈলঘাট থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত তার কোনো হদিস দিচ্ছে না। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক এই ধরনের নির্দয় ও অমানবিক কর্মকান্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় এখনও বিরোধী দল নিধনে বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। দেশকে বিরোধী দলশূন্য না করলে নব্য বাকশালী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা যাবে না। সেজন্য বিরোধী দল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে হরণ করতেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অদৃশ্য করা হচ্ছে। নিখিল চন্দ্র শ্রাবণ-কে তুলে নিয়ে যাওয়া অশুভ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিপজ্জনক কোন কিছু ঘটারই ইঙ্গিতবাহী। বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, জনগণ অশান্তি ও গভীর শংকার মধ্যে দিন যাপন করছে। শ্রাবণ নিখোঁজ থাকার ঘটনায় তার পরিবার ও বিএনপি নেতাকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি অবিলম্বে নিখিল চন্দ্র শ্রাবণকে জনসমক্ষে হাজির করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। কারণ তাকে সরকারের এজেন্সিগুলোই তুলে নিয়ে গেছে।
অপরদিকে গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেপ্তারকৃত নেতারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ নিউ মার্কেট থানার সাবেক সহ—সভাপতি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, কামরাঙ্গীচর থানাধীন ৫৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ দুলাল, শাহবাগ থানাধীন ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ শাহাদাত হোসেন, মোঃ আফসু মিয়া, ওয়ারী থানাধীন ৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি সদস্য তানভীর আহম্মেদ ওয়াসিম, শাহবাগ থানার ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ নজরুল ইসলাম ঢালী, কলাবাগান থানাধীন ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সিরাজ, লিটন, মাঈনুদ্দিন লালু, রহমত উল্লাহ, লাভলু, সাইদুল, বিপুল, মুগদা থানাধীন ৭ নং ওয়ার্ডের বালুর মাঠ ইউনিট বিএনপির সভাপতি মোঃ সোহাগ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তারেক, নিউমাকেট ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসাদ মাহমুদ পলাশ, গেন্ডারিয়া থানাধীন ৪৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ—সভাপতি নজরুল ইসলাম কাশু, সদস্য মোঃ কালাম ও মোঃ গোলাপ, যাত্রাবাড়ী থানাধীন ৬৪ নং ওয়ার্ড (পূর্ব) এর সহ—সাধারণ সম্পাদক মোঃ ববি, শাহবাগ থানাধীন ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য মোঃ হারুন, নজরুল ইসলাম ঢালী এবং ধানমন্ডি থানা বিএনপি নেতা সুমন, বংশাল থানার ৩৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হারুন, ৩৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আলম, ৩৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি মুগলটোলি ইউনিটের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম, চকবাজার থানাধীন ২৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান রবিন, চকবাজার থানাধীন ২৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মো: মনিউর রহমান মনির, নিউ মার্কেট থানাধীন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মোঃ হাশেম।
এদিকে খোকনের সহধর্মিণী বিএনপি নেত্রী শিরিন সুলতানা জানান, বুধবার দিবাগত গভীর রাত ২ টার দিকে সিপাহীবাগের নবীনবাগ ক্যান্ট রেষ্টুরেন্টের বিল্ডিংয়ের ভাইয়ের বাসা থেকে খোকনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ।
ওদিকে মিরপুর থানা বিএনপির সভাপতি ও মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য আবুল হোসেন আবদুল এবং তার ছেলে আবদুর রহমান রনিকে শ্যামলীর একটি বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ওদিকে এসব নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম এবং ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ।
খুলনা গেজেট/এনএম