খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

আমার মহান পেশার কথা

মিজানুর রহমান তোতা

আমি আজ আমার পেশার কথা বলতে চাই। অনুরোধ ব্যক্তিগতভাবে কেউ আহত হবেন না। এটি সামগ্রিক এবং সাম্প্রতিক চিত্র বর্ণনা। লেখাটি আমার একটি কবিতার অংশবিশেষ দিয়ে শুরু। এই কবিতাটি আমার ‘ক্ষতবিক্ষত বিবেক’ গ্রন্থের শেষাংশে প্রকাশিত।

স্মৃতির ভান্ডার শূন্য হচ্ছে
নিস্তব্ধতায় একাকি পথচলা
গর্বের জায়গাটায় রক্তক্ষরণ
দুর্দান্ত অস্থিরতায় ছটফট
নীতি আর নীতিহীন দ্বন্দ আজ প্রকট।

আষ্টেপৃষ্টে কুরে খাচ্ছে
সরলতার ভাবনাহীন দুর্বলতা
হৃদয়ে পাথর মারছে অবিরত
থমকে যাচ্ছে জীবন
তবুও—
অন্ধকার মাড়িয়ে আলোর সন্ধানে ছুটছি তো ছুটছিই।

সমাজদেহ ক্ষতবিক্ষতকারী দাপটধারীরা
দুর্বলকে করছে আঘাত,
বিনাপূঁজির ব্যবসা চলছেই।
মুখোশের চতুরালিতে অভ্যস্ত নিরবিচ্ছিন্ন পথচলা
ক্ষুদ্রপ্রকোষ্টে জীবনস্রোত গন্ডিবদ্ধ।—

আসলেই একটু বেশি বিরক্ত উৎপাদন করছি। আমার মূল পেশা সাংবাদিকতা। সাহিত্য চর্চা বিশেষ করে নিয়মিত কবিতা লিখি। বর্তমান অবস্থায় সাংবাদিকতা কেমন চলছে। এখনো লেখালেখি করার সুবাদে সাংবাদিকদের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত। সাংবাদিকদের আড্ডায় বিষয়টির নানাদিক উঠে আসে। সেকাল আর একালের উদাহরণ টানা হয়। তবে পেশাটির হতাশার চিত্রই বেশি ফুটে ওঠে। তাই মহান পেশা সাংবাদিকতার বিষয়ে একরকম মনোকষ্টেই মুলত লেখার ইচ্ছা পোষণ। নিজের বর্ণনা দিয়ে শুরু করি।

১৯৭৮ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হই অনেকটা নেশায়। তবে ১৯৮০ সালে পিআইবির লং কোর্সের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে পেশা হিসেবে বেছে নিই। তখন টগবগে যুবক। নেশা আর পেশা যাই বলুন না কেন অতিমাত্রায় সাংবাদিকতায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। পুরোদমে শুরু করি লেখালেখি। সেই থেকে লিখছি তো লিখছিই। বলা চলে আমি সমূদ্রের ব্যাঙ নই, কুঙোর। বড়ো মাপের সাংবাদিকও নই। সমাজ রাষ্ট্রের জনগণের আমার লেখালেখিতে কোন উপকারে আসে কী আসে না, সেটি জানি না। রাজধানীতে থাকলে হয়তো বড়মাপের সাংবাদিক হতে পারতাম। ঢাকার পত্রিকার ডেস্কে কয়েকদফা সুযোগ হয়েছিল, গ্রহণ করিনি। মেধা যোগ্যতায় কুলায়নি এটি ও বলতে পারেন। তবে মফস্বলে থেকে একটু আধটু সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত।

কলমজীবি হিসেবে পেশার প্রতি অন্ধত্বে অনবরত লিখেই যাচ্ছি-আজো লিখছি। নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে দৈনিক গণকন্ঠ ও দৈনিক সমাচারে নিত্যদিনের ঘটনা লিখেছি, দৈনিক স্ফুলিঙ্গের বার্তা সম্পাদক থাকাকালীন নিয়মিত কলাম ‘দেশ ও দশের কথা’ ও দৈনিক ঠিকানায় নির্বাহী সম্পাদক থাকাকালীন ‘চেতনার সংলাপ’ লিখেছি। লিখেছি সাপ্তাহিক ছুটি, সাপ্তাহিক পূর্ণিমায় অসংখ্য সচিত্র প্রতিবেদন। এরপর ১৯৯০ সাল থেকে দৈনিক ইনকিলাবে লাগাতার সমসাময়িক ঘটনাবলীর রিপোর্ট ও আদিগন্ত পাতায় ফিচার যে কত লিখেছি তার ইয়ত্তা নেই।

এরই মাঝে ‘মাঠ সাংবাদিকতা’ ও ‘ক্ষতবিক্ষত বিবেক’ দু’টি গ্রন্থ প্রকাশ করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রকাশের পথে কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নের খেলা’। এতকিছুর বিবরণ তুলে ধরার একটাই উদ্দেশ্য আমি সাংবাদিকতার বাইরে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা অন্য কোন উপায়ে অর্থ রোজগারের চিন্তা করিনি কখনোই। পিতা-মাতার সামান্য জমিজমা, ঘরভাড়া আমার মূল সম্বল। এখন বয়স ৬৫। পেশাটির প্রতি আমার দরদ মোটেও কম নয়। সেজন্য আমার গ্রন্থে এবং পত্রপত্রিকায় লেখালেখিতে সাংবাদিকতার আদ্যপান্ত ঘুরেফিরেই বেশি বেশি উল্লেখিত হয়েছে বরাবরই।

টানা ৪৩ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় বলা যায়, বিপুল প্রতিকূলতা, ঘাত-প্রতিঘাত ও গাঢ়ো কালো অন্ধকার উপভোগ করেছি। আবার কখনো ব্যাথা ও বেদনা জয় করে আলো আকাঙ্খার মাঝে নিত্যনতুন স্বপ্ন দেখে এগিয়ে চলেছি।

সুর্যোদয় আর সূর্যাস্ত অসংবাদিত সত্য এর মতোই মনে করেছি চলমান জীবনে ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ থাকবে এটিই স্বাভাবিক। সব জানালা দরজা বন্ধ হয়ে আবার মুহূর্তে বাতাসের ঝাপটায় খুলে গেছে।

কুসুমাস্তীর্ণ না হলেও বিরাট কংকটাপূর্ণ যে তা নয়। তবে অনেকটাই মধুর বলা যায়। মাঠ সাংবাদিকতায় কোথায়, কীভাবে এবং কেন বাধা আসে, কতটা আনন্দ ও আশার স্বপ্নে ভাসে, বিভাজনের রেখায় মহান পেশায় বিঘœতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি কতটা, কীভাবেই বা হয়েছে বিবেক ক্ষতবিক্ষত, তা জীবনের উপলব্ধি ও বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার সুবর্ণ সুযোগ হয়েছে।

হয়েছি অপরূপ বর্ণচ্ছটায় মুগ্ধ। ভুলে গেছি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো যন্ত্রণাদায়ক সব অত্যাচার নির্যাতন। শুধু পেশার কারণেই ব্যক্তিগতগভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। হয়েছি মামলা হামলার শিকার। এর মাঝেও পরিষ্কার একটা বিশ্বাস জন্মেছে সামাজিক দায়বোধ থেকে করা সৎ সাংবাদিকতায় অবশ্য সাময়িক আঘাত আসলেও পরাস্ত করতে পারে না। এক্ষেত্রে মোটেও বিশ্বাসহারা হইনি কখনো।

তাই তো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’। সাংবাদিকতা অর্থ জীবনভর কঠিনেরে ভালোবেসে যাওয়া। আমার মনে হয় এই সত্য উপলব্ধি করেই হয়তো বা পেশায় জীবন কাটালাম। ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু জানি সংবাদপত্র হলো প্রতিদিনের সত্যিকারের ইতিহাস। একজন সাংবাদিকের লেখালেখিও ইতিহাস হয়ে থাকে। সমাজের দর্পন হলো সংবাদপত্র। একজন সাংবাদিকের কোন বন্ধু নেই। এসবই এখন যেন কথার কথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ইতিহাসে বন্দি হয়ে যাচ্ছে।

নির্দিষ্ট কোন জাতীয় স্থানীয় দৈনিক কিংবা কোন মিডিয়া এবং কোন জেলা বা উপজেলার সাংবাদিকের উদ্দেশ্য করে নয়, সামগ্রিকভাবে গোটা পেশার মর্যাদা ক্রমাগত অবনমিত হবার মনোকষ্টে লিখছি। ব্যক্তিগতভাবে কারো আঘাতের উদ্দেশ্যও নয়। চারপাশে যা দেখছি কিংবা আলোচনা হচ্ছে তা মোটেও সুখকর নয়।

সাংবাদিকতার মর্যাদা সম্মান ঐতিহ্য আগের পর্যায়ে কী আছে? –আমি মনে করি অনেক কমেছে। কেন্দ্র কিংবা মাঠের সাংবাদিকতা সবখানেই এখন কমবেশি নানা কারণে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে– একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। মাঠ ভরে গেছে অপেশাদারে। অথচ যুগে যুগে এই মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করে সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রেখে সন্মানিত সমাদৃত হয়েছেন। তাদের কদর ছিল আলাদা।

বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই সাংবাদিকতা পেশায় আছি এটি পরিচয় দেওয়াও লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নামে সাংবাদিক অথচ ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িত। ‘কী নামে ডাকবো তোমায়?’–এমন পরিস্থিতি হয়েছে। অনেক সাংবাদিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ এমন কিছু নেই যা করেন না। অবশ্য স্বীকার করতেই হয়, তাদের দাপট এখন অনেকটাই বেশি। মহান পেশা সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হয়েছে অনেক সাংবাদিকেরই। কিছু মিডিয়া তো পরিচিতি পেয়েছে সাংবাদিক জন্ম দেওয়ার হ্যাচারি হিসেবে।

ব্যক্তিগত প্রচারে নয়, প্রাসঙ্গিকভাবেই উল্লেখ করতে হচ্ছে, ’৮০এর দশকে অবিভক্ত যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, প্রেসক্লাবের একবার সেক্রেটারী, তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি।

এরও আগে একজন সাধারণ সাংবাদিক হিসেবে দেখেছি সিনিয়রদের নীতি নৈতিকতা। বিএফইউজের তুখোড় নেতা আহমেদ হুমায়ুন, নির্মল সেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুর আহমেদ, আমানুল্লাহ কবীর, আলতাফ মাহমুদ, জহুরুল হক ও শাহাজান ভাইসহ সাংবাদিক নেতাদের দেখেছি একেবারেই কাছ থেকে। তাদের মধুর সান্নিধ্য পেয়েছি। দেখেছি তাদের ব্যক্তিত্ব, নীতি আদর্শ। আমরা মফস্বলের আর উনারা রাজধানীর-এমন আচরণ কখনো পাইনি। জাতীয় প্রেসক্লাবে গেলে কিংবা কোন মিটিংএ বসলে তেমন দূরত্ব মনে হয়নি। আমরা সবাই এক অভিন্ন-এটিই প্রতীয়মান হয়েছে।

সে সময় সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলনের পাশাপাশি অন্যতম একটা দাবিতে জোর আন্দোলন ছিল পেশাদার সাংবাদিক হবেন সংবাদপত্রের সম্পাদক। আজ টাকা থাকলেই যে কেউ মিডিয়ার কর্ণধার বনে যান রাতারাতি। কোন কোন জেলায় বা অঞ্চলে দেখা গেছে ব্যবসায়ী কিংবা ভিন্ন পেশায় তারা সম্পাদক হবার অবাধ সুযোগ পাচ্ছেন। জেলা প্রশাসকগণ কোন নীতিমালয় নয় জেলা বা উপজেলায় অনায়াসে শতফুল ফুটিয়ে চলেছেন। “কেউ ফেরে না খালি হাতে খাজা বাবার দরবারে” এর মতোই এমন অনেক জেলা রয়েছে। এতে অনেক পত্রিকা আন্ডারগ্রাউন্ডের কিংবা ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো সাপ্তাহিক দৈনিক বের হচ্ছে। সাংবাদিক নেই অথচ সংবাদপত্র। ভুয়া মাস্টার রোলের মতো সাংবাদিক দেখিয়ে ডিপার্টমেন্ট ফিল্ম এন্ড পাবলিকেসন্স (ডিএফপি) থেকে বিজ্ঞাপনসহ সরকারের সব সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে। আবার সেসব পত্রিকা থেকে ভুরি ভুরি অসাংবাদিকও তৈরী হচ্ছে।

এসব নানা কারণে মিডিয়ার অপব্যবহারও বহুমাত্রায় বাডছেই। বাডছে অপেশাদার সাংবাদিকের সংখ্যা। সেজন্যই পেশাটি অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণের পথ কী তা বড় বড় সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতাদের চিন্তাভাবনার সময় এসেছে বলে মনে করি।

সাংবাদিকতা করতে রাজনৈতিক দলদাস, ক্যাডার, সন্ত্রাসীদের দাম্ভিক চেহারার মুখোমুখি হতে হয়েছে বহুবার। সমস্যা, বাধা, বিপদ আপদ, বঞ্চনা, জীবন নাশের হুমকি ধামকি, প্রশাসনিক হয়রানী ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তাতে মোটেও পিছপা হইনি। কিন্তু এখন বড়ই বিচলিত হচ্ছি পেশাটির মর্যাদা ও ঐতিহ্য রক্ষা নিয়ে। অপশোদারদের হাতে পেশাদারদের নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে। ভয়টা সেখানেই।

সাংবাদিকতার নীতিমালা নিয়ে সেই ‘৮০ এর দশকেও লিখেছিলাম। অবশ্য তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। আজকের মতো নয়। সাংবাদিকতার পেশায় যারা জড়িত তারা একটু গভীরভাবে ভাবুন পেশাটির মর্যাদা রক্ষা করুন। রুখে দাঁড়ান অপেশাদারদের বিরুদ্ধে, যারা পেশার মর্যাদা নষ্ট করছে। প্রকৃত সাংবাদিকরা সাহস নিয়ে সোচ্চার হলে অপসাংবাদিকতার সাথে যুক্তরা পালিয়ে যাবেই যাবে, সাফ হবে জন্জাল। আর যারা জেলায় জেলায় পত্রিকার ডিক্লারেশন দেন তাদের কঠোর হওয়া দরকার।

যাই হোক, মহান এই পেশা যেদিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না, দায়ী করবে। তাই দায়বোধ থেকে এগিয়ে আসুন। অবশ্য ইতোমধ্যে অনেকস্থানে বাদ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে। পুরানোদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা দরকার। বিশেষ করে যারা এই পেশায় সততা, যোগ্যতা নিয়ে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন তাদের সোচ্চার হতে হবে।

সবশেষে বলবো, এতকিছুর পরেও আমি হতাশ নই, প্রচন্ড আশাবাদী। বিভিন্নস্থানে অনেকেরই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা ও সোচ্চার হতে আশ্বস্ত হচ্ছি। নতুনরা জেগে উঠছে। সেজন্যই আশাবাদ মহান পেশার মর্যাদা পুনরুদ্ধার হবেই হবে। তারুণ্যেরা হাল ধরবেই।

(সাংবাদিকতার নীতিমালা নিয়ে ‘৮০ দশকে আমার লেখার পুরানো কয়েকটি কাটিং তুলে ধরা হয়েছে)




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!