খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

আমজাদ হোসেন কীভাবে পালাল : হাইকোর্ট

গে‌জেট ডেস্ক

বেসরকারি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে সোমবার দুপুরের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থপাচারের অভিযোগ ছিল এসএম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি জানান, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন- তা আগামীকাল (সোমবার) দুপুরের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আসামি দেশত্যাগ করে চলে গেল আর আপনারা নীরব দর্শক হয়ে দেখতেছেন। যেখানে দুদক আছে, বিএফআইইউ আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, তারপরও সে কীভাবে পালিয়ে যায়!’ আদালত বলেন, ‘মামলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, তারপরও কীভাবে সে দেশ ত্যাগ করল?’

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘ইয়েস মাই লর্ড, দুদকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সে কীভাবে চলে গেল। মাই লর্ড আমরা সবসময় ট্রান্সফারেন্ড, আমরা কাজ করছি। ’ তখন আদালত বলেন, ‘বুঝলাম তো আপনারা কাজ করতেছেন, তাহলে গেল কী করে? কী পদক্ষেপ নিলেন? সে কীভাবে দেশ ছাড়ল?’

দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘এটা নিয়ে আমার অফিসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কথা না বলে কিছু বলতে পারব না। ’তখন আদালত বলেন, ‘তাহলে এটা আমাদের জানান, তার বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা ছিল কিনা? আর নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকলে সে গেল কীভাবে। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে, কী কাজ করল? তাকে কেন ধরতে পারল না। ’

আদালত এ সময় বলেন, ‘কী কী মামলা করেছেন, কীভাবে ফ্রিজ করলেন, কীভাবে নিষেধাজ্ঞা হলো, কখন কীভাবে পালিয়ে গেল- এগুলোর বিস্তারিত ইতিহাস আমাদের জানাবেন। আমরা আগামীকাল (সোমবার) আদেশ দেব। অনেক কাজ করতেছেন, এটা তো মুখে বললেই হবে না। কিন্তু পালানো থামাতে পারছি না। এটা তো একটা সিরিয়াস ম্যাটার। আমরা যদি এখন এসবের বিষয়ে লক্ষ্য না রাখি তাহলে তো দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা সিরিয়াস ফিনান্সিয়াল ক্রাইম। এ বিষয়ে আমাদের সিরিয়াস স্ট্যান্ড নেওয়া উচিত। দেশের টাকা বাইরে যাবে কেন?’

আদালত আরও বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের অর্থনীতি ভালো থাকুক। দেশের মানুষ উপকৃত হোক, দেশের উন্নয়ন হোক, মানুষ যাতে ডাল-ভাত আনন্দের সঙ্গে খেতে পারে। এভাবে টাকা যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে দেশের মানুষ কীভাবে সুন্দর জীবন-যাপন করবে? এগুলো আমাদের দেখতে হবে। এটা দেখা দুদকের প্রধান দায়িত্ব। ’

দেশ ছাড়লেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের আমজাদ শিরোনামে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। পরে আদালত দুদকের আইনজীবীকে তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন তার বিস্তারিত জানাতে নির্দেশ দেন।

গত ৭ নভেম্বর একটি পত্রিকায় ‘হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, দেশ ছাড়লেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের আমজাদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। স্থল সীমান্ত দিয়ে ৩ নভেম্বর ভারত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরির আমজাদও রয়েছেন। তার পারিবারিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করেন আদালত। এ ছাড়া সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা বিপুল অঙ্কের অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাসাদ গড়েছেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!