খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

আব্দুর রশিদের কাঠের প্রাসাদ নজর কাড়ছে সবার

একরামুল হোসেন লিপু

সৃষ্টিশীল কাজের জন্য সৃষ্টিশীল মন থাকা প্রয়োজন। সেটাই প্রমাণ করলেন আব্দুর রশিদ বিশ্বাস। নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ, বাহারি সৌন্দর্যে ভরপুর, অসাধারণ শৈল্পিক, দৃষ্টিনন্দন তিন তলা একটি কাঠের স্থাপনা তৈরি করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। দৃষ্টিনন্দন এবং নজরকাড়া এ স্থাপনাটি দেখার জন্য কৌতুহলী মানুষের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নান্দনিক স্থাপনাটি সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদেরও নজর কাড়ছে। দর্শনার্থীরা উপভোগ করছে স্থাপনাটি সৌন্দর্য।

আব্দুর রশিদ বিশ্বাস পেশায় একজন শিক্ষক। খুলনার তেলিগাতী কেডিএ বাইপাস সংযোগ সড়কে অবস্থিত খানজাহান আলী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। একজন সৃষ্টিশীল এবং প্রগতিশীল মানুষ। তিনি তার সৃষ্টিশীল কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন কাঠের তৈরি তিনতলা স্থাপনা তৈরীর মাধ্যমে। স্থাপনাটির ডিজাইন থেকে শুরু করে এটি তৈরীর পিছনে খুঁটিনাটি সব কিছুতেই তার অসাধারণ মেধা, মনন এবং যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এক্ষেত্রে তার উৎসাহ, সাহস, এবং মনোবল জুগিয়েছেন স্ত্রী তাজরীন ফারহানা এবং বন্ধু বৃক্ষ প্রেমী শেখ জাহিদ ইকবাল। আর আর্থিক পরামর্শ এবং সহায়তা পেয়েছেন জনতা ব্যাংক, কুয়েট কর্পোরেট শাখা ইনচার্জ মোঃ আঃ হামিদের কাছ থেকে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদ বিশ্বাস সৃষ্টিশীল কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতেন সবসময়। কল্পনার জগতে নিজেকে ডুবিয়ে ভাবতেন এমন কিছু একটা করার যা মানুষ দেখে অভিভূত হবেন এবং হৃদয়ে দাগ লেগে থাকবে। এমন চিন্তা থেকে তিনি স্বাধীনতার মাসকে বেছে নেন।

তেলিগাতী কেডিএ বাইপাস সংযোগ সড়কের শেষ প্রান্তে কেডিএ খুলনা- মংলা মহাসড়কের পাশে ৩ শতক জায়গার উপর ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে তিনতলা স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কাঠ এবং বাঁশের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে স্থাপনাটি। স্থাপনাটির বাইরের অংশ সম্পূর্ণ কাঠের তৈরী এবং ভেতরের সিলিংগুলো কারুকাজ সম্বলিত তল্লা বাঁশ দিয়ে তৈরি। লাল এবং সাদা রংয়ের মিশ্রণে সাজানো হয়েছে স্থাপনাটি। এটির চালে ব্যবহার করা হয়েছে আকর্ষণীয় লাল টিন। যেটি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ক্যাঙ্গার ব্র্যান্ডের। স্থাপনাটির সামনে রয়েছে দর্শনীয় একটি নাগ বারান্দা। দোতলা এবং তিনতলায় উঠার জন্য তৈরী করা হয়েছে কাঠের তৈরী সিঁড়ি। নীচতলার চারদিকে ৫ ফুট বারান্দা এবং দোতলার চারদিকে ৪ ফুট প্রশস্ত বারান্দা রাখা হয়েছে। স্থাপনাটি তৈরী করতে সময় লেগেছে ১ বছর ৩ মাস।

প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদ বিশ্বাস জানান, স্থাপনাটি তৈরি করতে মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০ সেপটি কাঠ এবং ২’শ তল্লা বাঁশ ব্যবহৃত হয়েছে। শুরুতে ১২ জন অভিজ্ঞ কাঠমিস্ত্রি একাধারে ৩ মাস, এরপর ৬ জন মিস্ত্রি ৪ মাস এবং বাকী সময় ৩ জন মিস্ত্রি একনাগাড়ে কাজ করে স্থাপনাটি তৈরীর কাজ সম্পন্ন করেছেন।

বাঁশের সিলিংয়ের কারুকাজ এবং নকশা তৈরীর জন্য কুড়িগ্রাম থেকে আগত ৪ জন বাঁশের মিস্ত্রি একটানা ৪০ দিন কাজ করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্থাপনাটিতে থাকবে বাহারি রঙ্গের আলোকসজ্জা। এটি তৈরী করতে ব্যয় হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। জনতা ব্যাংক কুয়েট কর্পোরেট শাখা থেকে ঋণ নিয়ে স্থাপনাটি তৈরীর কাজ সম্পন্ন করেছি। এটি ব্যবহৃত হবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঠমান্ডু ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট হিসেবে। দর্শনার্থীদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে সব সময়।

কাঠমান্ডু ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাঠমান্ডু অর্থাৎ কাঠের প্রাসাদ। সম্পূর্ণ স্থাপনাটি তৈরী করা হয়েছে কাঠ দিয়ে। এ কারণে এটির নামকরণ করা হয়েছে কাঠমান্ডু আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট শব্দ দুইটি সংযোজন করে এটির নামকরণ করা হয়েছে কাঠমান্ডু ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট। ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় জমকালো আয়োজনে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এটির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হবে। ভবিষ্যতে স্থাপনাটির কলেবর বৃদ্ধির জন্য আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন আব্দুর রশিদ বিশ্বাস।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!