স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এক সপ্তাহের মাথায় আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। আজ শনিবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যেকোনো সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। ফলে তাঁকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। তিনি অনিচ্ছুক হলেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলো আবারও।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। এজন্য তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকবার হাসপাতালে নেওয়া হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। সবশেষ ২৭ দিন একই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ৭ নভেম্বর বাসায় ফিরেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে ২৫ অক্টোবর তাঁর ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাঁর বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজার দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে চিকিৎসা চলছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের। ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় তাঁর। এরপর ফিরিয়ে আনা হয় গুলশানের বাসভবনে। অবস্থার অবনতি হলে ২৭ এপ্রিল একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিএনপিপ্রধানকে।
৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপি থেকে খালেদা জিয়ার করোনামুক্তির খবর দেওয়া হয় ৯ মে। তবে সিসিইউতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। গত ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে কেবিন ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯ জুন বাসায় ফেরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।
গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবার খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হলেও সরকার তাতে সায় দেয়নি।