সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদক আবারও পদত্যাগ করেছেন। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়া সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে রোববার (২ জানুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন তিনি।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা। এর আগে গত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে গৃহবন্দি করে। তবে সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর হামদককে গত ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করা হয়। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে স্বাক্ষরিত ১৪ শর্ত বিশিষ্ট রাজনৈতিক চুক্তি অনুযায়ী তাকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অবশ্য ক্ষমতা ভাগাভাগির ওই চুক্তিকে অবৈধ দাবি করে এর বিরোধিতায় আন্দোলনে নামেন বিক্ষোভকারীরা। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি নয়, সুদানে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
মূলত রাজনৈতিক চুক্তি করে অভ্যুত্থানকারীদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিনই বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে ছিলেন আবদাল্লাহ হামদক। এ ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। যদিও সুদানি সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের চুক্তিতে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও অংশ নিয়েছিল।
রোববার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদক বলেছেন, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি। এখন অন্য কাউকে এই দেশকে সেবা করার সুযোগ দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সুদান বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তিনি চেষ্টা করেছেন। তবে তার চাওয়া মতো সবকিছু হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদককে আটক করে সুদানের সেনাবাহিনী। সুদানের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নেন।
রয়টার্স বলছে, বিক্ষোভে পিছু হটে আবদাল্লাহ হামদকের হাতেই প্রধানমন্ত্রীত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার আগে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে সুদানে ৪৭ জন নিহত হন। এছাড়া অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের সময় সুদানের ১৩ নারী ও মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে জানায় জাতিসংঘ।
এছাড়া গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবদাল্লাহ হামদকের ঘনিষ্ঠ দু’টি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি কার্যকর এবং সকলের রাজনৈতিক সমর্থন পেলেই কেবল প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে চান হামদক।
কারণ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং হামদককে স্বাধীনভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের সুযোগ দিতে ওই চুক্তিতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু না হওয়ার করণেই হয়তো পদ ছাড়লেন আবদাল্লাহ হামদক।