আফগানিস্তানে নারীদের সাময়িকভাবে কর্মস্থলে যেতে বারণ করেছে তালেবান। তারা বলছে, আফগান নারীদের কাজে যেতে হবে না, তারা বাড়িতে বসেই বেতন পাবেন। এছাড়া তাদেরকে চাকরি থেকেও বাদ দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। তালেবানের এ মুখপাত্র দাবি করেছেন, তারা স্থায়ীভাবে নারীদের কর্মস্থল থেকে বিরত রাখছে না। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কর্মস্থলে যেতে বারণ করছে।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারীদের এখন বাড়িতে থাকা উচিত। তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে না এবং তাদের বেতন পরিশোধ করা হবে।
এদিকে আফগানিস্তানের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষাবিদদের প্রতি দেশ ছেড়ে না যাওয়ার অনুরোধ করেছে তালেবান। ঐ সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ করেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আফগানবাসীকে দেশ-ছাড়ার উসকানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তারা যেন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াটা বন্ধ করেন। যুক্তরাষ্ট্র যেন আফগানিস্তানের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষাবিদসহ দক্ষ মানুষগুলোকে দেশ ছেড়ে যেতে উসকানি না দেয়। তালেবানের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরতে হবে নির্ধারিত দিনেই।
পাঞ্জশিরের বিদ্রোহীদের উদ্দেশে বার্তা পাঠিয়েছেন, তাঁরা যাতে প্রতিরোধ বন্ধ করে তাঁদের (তালিবানের) প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। কেননা, আমাদের লক্ষ্য এক, ফলে আপনারা কাবুলে ফিরে আসুন, ভয় পাবেন না, যুদ্ধ বন্ধ করুন।
আফগান নাগরিকদের আর কাবুল বিমানবন্দর যেতে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তালেবান। কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে জানায় গোষ্ঠীটি।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানদের বিমানবন্দরে যেতে আমন্ত্রণ করছে।
তিনি বলেন, আমরা আমেরিকানদের বলতে চাই, কোনো আফগানকে দেশ ছেড়ে যেতে উৎসাহ দেবেন না। তাদের প্রতিভা আমাদের দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জানান, আফগান মিডিয়া, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলে দেওয়া হবে এবং স্থানীয় সরকারের কাজ পুনরায় চালু হবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় প্রতিদিনই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভ্যান। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা চ্যানেল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় প্রতিদিনই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করছে। কিন্তু এখনও তালেবানের সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনার কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভাবছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভ্যানের বরাত দিয়ে খবরে আরও বলা হয়, যত মার্কিন নাগরিক আফগানিস্তান ছাড়তে চায় তাদের সবাইকে ৩১ আগস্টের মধ্যেই উদ্ধার করে আনা সম্ভব বলে তার বিশ্বাস। তবে জো বাইডেন প্রতিদিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাহারের যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়সীমার মধ্যেই তাদের উদ্ধার অভিযান শেষ করতে চায়। এই সময়সীমা আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশ যে আহ্বান জানাচ্ছে, তাতে এখনো সাড়া দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের পরিকল্পনায় কোন রদবদলের সময় এখনো আসেনি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) জি-সেভেন দেশগুলোর যে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি এই সময়সীমা বাড়িয়ে মার্কিন সৈন্যরা যেন আরও কিছুদিন কাবুল বিমানবন্দরে থাকে, সেজন্যে চাপ দেবে।
তবে তালেবান এরই মধ্যে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, বিদেশি সৈন্যদের অবস্থানের সময়সীমা বাড়ানো হলে সেটি হবে চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে, মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানের সময়সীমা বাড়ানো হবে কিনা, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সিদ্ধান্ত নেবেন।
খুলনা গেজেট/এএ