খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে কারখানায় আগুন : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২
  হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম তদন্তে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫

আপনার শিশু-কিশোর কি বিষণ্ণতায় ভুগছে? জেনে নিন এর কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, মনোবিজ্ঞানী

শিশু কিশোরের কথা মনে পড়লে আমাদের মনের উপর যে ছবিটি ভেসে উঠে, তাহা হলো হাসি খুশি প্রাণোচ্ছ্বল এক জীবন্ত ছবি।বৈশিষ্টগত ভাবে প্রাণোচ্ছ্বলতা শিশুদের মানব মনের বিকাশের অন্যতম নির্দেশক। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কখনো কখনো কতিপয় মানসিক সমস্যা শিশুর জীবনের সে প্রাণজয়ী ভাবধারাকে নাস্তানাবুদ করে তুলতেও সক্ষম। এমনি একটি মানসিক সমস্যা হলো শৈশব ও কৈশোরের বিষণ্ণতা।

শিশু কিশোরদের বিষণ্ণতার লক্ষণ: বয়স্কদের সঙ্গে শিশু কিশোরদের বিষণ্ণতার কয়েকটি লক্ষণের পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন : আত্মহত্যা প্রচেষ্টা ও অপরাধবোধ শিশু কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। জ্ঞানীয় ভাবধারায় দেখা যায়-জীবনের বেশির ভাগ ঘটনা সমূহকে বিষণ্ণগ্রস্ত শিশুরা বেশি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ণ করেছে। বিষণ্ণ শিশু কিশোররা দিনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন সামাজিক পরিবেশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পছন্দ করে। এরুপ শিশুদের ভিন্ন বিষয়ে এদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করণে সমস্যা দেখা দেয়। কোন কাজ তারা মনের আনন্দ সহকারে করতে ব্যর্থ হয়। অনেক সময় নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দোষ দেওয়ার প্রবণতা ও এদের মধ্যে দেখা দেয়। দিনের বেশির ভাগ সময়ে এরা দু:খিত ও বিষণ্ণ মেজাজে থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশু নিজের বাস্তব কাজকর্মের প্রতি আগ্রহ ও আনন্দহীনতা প্রকাশ করে থাকে।

শিশু কৈশোরের বিষণ্ণতার কারণ :

(১) বংশগত কারণ : পিতা মাতার এ রোগ থাকলে, তার সন্তানদের মধ্যে এ প্রকার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

(২) ত্রুটিপূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ : শিশু কিশোরেদের সাথে পিতা মাতার সম্পর্ক গোলযোগ পূর্ণ হলে, তাহা শিশুর মনে বিষণ্ণতা সৃষ্টি করতে সহায়ক হতে পারে।

(৩) সামাজিক দক্ষতার অভাব : যে সব শিশু কিশোরদের সামাজিক দক্ষতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে, তাদের ছোট বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে।

(৪) অর্ন্তমুখী ব্যক্তিত্বের ধারা : যে সব শিশু কিশোর অন্তমূর্খী ব্যক্তিত্বের অধিকারী, সাধারন্ত তাদের বন্ধু বান্ধব কম থাকায়; এদের জীবন চলার পথ আনন্দঘন থাকার পরিবর্তে অনেকটা নিরানন্দ থাকে বিধায়, এরা অপেক্ষাকৃত বেশি বিষণ্নতায় ভোগে

(৫) পিতা মাতার ভূমিকা : পিতা মাতা শিশুকে বিভিন্ন ভাল কাজে অনেক সময় প্রশংসা করতে কার্পণ্যতা প্রদর্শণ করে। পরিবর্তে বিভিন্ন সময়ে শিশুর সমালোচনা করে থাকে-পিতা মাতার এরুপ আচরণ শিশুর মধ্যে আত্মবমানকর অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, যা শিশুর মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে।

(৬) মনোবিজ্ঞানী বেকের তথ্য : এ তথ্যের আলোকে মনে করা হয় যে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের চিন্তা ধারায় কোন ঘটনার নেতিবাচক বা পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাখ্যায় বেশিভাবে অভ্যস্ত।

(৭) স্নায়ু রসায়ন মতবাদ-নর-এপিনেফ্রিনের ভূমিকা সংক্রান্ত মতবাদ অনুসারে, শরীরে নর-এপিনেফ্রিনের মাত্রা কমে গেলে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা দেয়। আবার সেরোটনিন সম্পর্কিত তথ্যে বলা হয়েছে যে, শরীরে সেরোটনিনের মাত্রা কমে গেলে শিশু কিশোরদের ভিতর বিষণ্ণতা দেখা দেয়।

শিশু- কিশোরদের বিষণ্নতা দূর করার উপায় : শিশু কিশোরদের ঔষধ প্রয়োগে বিষণ্ণতায় খুব বেশি ফলপ্রসূতা লক্ষ্য করা যায় না। তাই কিছু কিছু মনোসামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণে সুফল পাওয়া সম্ভব, সেগুলো হলো-

(১) আন্ত:ব্যক্তিক চিকিৎসা : এ চিকিৎিসা পদ্ধতিতে শিশু-কিশোরদের সমবয়সী কর্তৃক পীড়ন, পিতা-মাতার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং কৃতিত্ব সম্বন্ধীয় সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।

(২) জ্ঞানীয় চিকিৎসা পদ্ধতি : এ প্রকার তথ্য অনুযায়ী মনে করা হয় যে, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীর গভীর দু:খবোধ এবং আত্মমর্যাদা বিধস্ত হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো- ওই সব শিশু কিশোরের ভুল/ত্রুটিপূর্ণ চিন্তাধার। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হলে চিকিৎসক বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে এবং নিজের সম্পর্কে রোগীর যে সব মতামত থাকে, সেগুলো বদলাতে চেষ্টা করেন। তারপর চিকিৎসক রোগীকে শিখিয়ে দেন, যাতে সে তার নেতিবাচক চিন্তাধারা গুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং বুঝতেও পারে যে এগুলো কিভাবে তাকে বাস্তবধর্মী এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দিচ্ছে।

(৩) পিতা মাতাকে প্রশিক্ষণ প্রদান : এ পদ্ধতিতে পিতা মাতার প্রতি শিশুর ইতিবাচক মনোভাব তৈরীতে সময় উপোযোগী ইতিবাচক আচরণ ধারা তৈরীতে সহায়তা করা হয়।

(৪) বিদ্যালয় সংক্রান্ত পরিবেশের পরিবর্তন : অনেক সময় শিশু কিশোররা বিদ্যালয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের স্বীকার ও বন্ধু-বান্ধব বা শিক্ষকদের নিকট হতে প্রত্যাশিত আচরণ বা সহযোগীতা থেকে বঞ্ছিত হয়, সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিকে পরিবর্তনে চেষ্টা করে কাঙ্খিত ফল লাভের চেষ্টা করা হয়।

পরিশেষে বলা যায়, আপনার শিশু আপনার, দেশ ও জাতীর ভবিষ্যৎ। তাদের কোন প্রকার মানসিক সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে বরং একজন মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ করে কাংঙ্খিত সুফল নিতান্তই পাওয়া সম্ভব।

লেখক : সহকারি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা। ফ্রি পরামর্শ: ০১৭১৪৬১৬০০১

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!