রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ২১ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেশটিকে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচে হারিয়েছে টাইগাররা। এমন ঐতিহাসিক জয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
সরকারি চাকরিতে মাত্রাতিরিক্ত কোটার বিরোধিতা করে গত জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে এবং পুরো দেশের সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন থামাতে গিয়ে সরকারি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জুলাই এবং আগস্ট মাসে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছে। আর তাদের রক্তের বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। ইতিহাস গড়ার এই মুহূর্তে তাদের কথা স্মরণ করল বাংলাদেশ দল। বিশেষ এই জয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করেছে তারা। রোববার (২৫ আগস্ট) ম্যাচ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি জানান বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে স্মরণীয় এক টেস্ট হয়ে থাকবে। প্রতিপক্ষের মাটিতে বাংলাদেশের এমন দাপুটে জয় ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি। তাও এমন দলকে হারিয়েছে, যাদের সঙ্গে গত ২১ বছরে একটি টেস্টও জেতেনি টাইগাররা।
টস জিতে বোলিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। ১৬ রানে স্বাগতিকদের ৩ উইকেট ফেলে দেয় বাংলাদেশি পেসাররা। তবে সাইম আইয়ুব, সৌদ শাকিল এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে খেলায় ফেরে পাকিস্তান। শাকিলের ১৪১ এবং রিজওয়ানের অপরাজিত ১৭১ রানে ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৮৮৮ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশও ভালো শুরু পায়। মুশফিকুর রহিমের ১৯১, সাদমানের ৯৩, মেহেদী হাসান মিরাজের ৭৭, লিটন দাসের ৫৬ ও মুমিনুলের ৫০ রানের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসেই লিড পায় বাংলাদেশ। সবগুলো উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান তোলে টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের চেপে ধরে বাংলাদেশি বোলাররা। সাকিব, হাসান মাহমুদরা ধসিয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। তিনজন ব্যাটার আউট হন কোনো রান না করেই। একমাত্র রিজওয়ান ছাড়া আর কোনও ব্যাটারই তেমন রান পাননি। আব্দুল্লাহ শফিক ৩৭, বাবর আজম ২২, রিজওয়ান ৫১ ও শান মাসুদ করেন ১৪ রান। এছাড়া আর কোনও ব্যাটার ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। সাকিব আল হাসান ও হাসান মাহমুদ নেন ৩টি করে উইকেট। শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। আর বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রান।
মামুলি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কোনও বেগ পেতে হয়নি টাইগারদের। ৬.৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম মিলে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। আর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে টেস্টে হারালো বাংলাদেশ।
এই টেস্ট জয়ে ২০০৩ সালের মুলতান টেস্ট হারের আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘোচাতে পেরেছে টাইগাররা। সেবার জয়ের অনেক কাছে গিয়েও হারতে হয়েছিল টাইগারদের।