বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুখবর। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মন্দার আশঙ্কার মধ্যে এই সুখবর এসেছে। যে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য বিশ্ব অর্থনীতিতে ওলোটপালট করে দিচ্ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে সেই তেলের বড় দরপতন হয়েছে। গত কয়েক দিনে টানা কমে নেমে এসেছে ৮০ ডলারের নিচে, যা দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে দেশে তেলের দাম কমানোর এখনো কোনো চিন্তাভাবনা করছে না সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই অপরিশোধিত তেল ৭৯ ডলার ১১ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে ৮৭ ডলার ১১ সেন্টে। এক সপ্তাহ আগে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯০ ডলারের বেশি ছিল। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ছিল ৮৫ ডলারের বেশি।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৭৯ ডলার ১২ সেন্ট। আর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৮৬ ডলার ৩৯ সেন্ট।
মূলত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের বিভিন্ন শহরে এখনো লকডাউন চলছে। কোথাও কোথাও লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু সরকার অনড়। সে কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থিমিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে চীনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবার বেশ খানিকটা কমবে। অন্যদিকে আমেরিকান মুদ্রা ডলার দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার বড় অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ আশঙ্কায় তেলের দাম কমছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশ ঋণের সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে। অন্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোও সেই একই পথ অনুসরণ করছে। আর এটিই বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে। এর জেরেই বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘বিশ্বে কী মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক বলেছে, করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি। দিন দিন বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার একযোগে বাড়িয়েই চলেছে। এর জেরে বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৩ সালে মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।