সৌদি আরবে হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ ৮ জিলহজ। মক্কার অদূরে মিনার তাঁবুতে হাজিদের অবস্থানের দিন আজ বৃহস্পতিবার। তবে ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য এর আগে রাতেই আল্লাহর মেহমানরা পৌঁছাবেন মিনায়। ৯ জিলহজ তাঁদের আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক। ঐদিন পবিত্র হজ বা আরাফাহ দিবস।
মিনার তাঁবুতে হাজিরা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ তথা তালবিয়া পাঠ ছাড়াও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। হজের মাসলা মাসায়েল নিয়ে নিজেরা আলোচনা করেন। আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে মোনাজাত করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে মিনা থেকে হাজিরা আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা দেবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ। এখানে কেউ অবস্থান না করলে তার হজ আদায় হবে না।
আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে গ্র্যান্ড মুফতি জোহরের ওয়াক্ত শুরু হলেই খুতবা দেবেন। সেখানে জোহর ও আসরের নামাজের পরপর জামাত হবে। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত ওই ময়দানে অবস্থান করে হাজিরা আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে কান্নাকাটি করে কাটাবেন। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ময়দান ত্যাগ শুরু করবেন। মিনায় ফেরার পথে মাঝে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। ১০ জিলহজ শনিবার সকালে ওই ময়দান ত্যাগ করে মিনায় ফিরবেন।
এছাড়া ঐদিন মিনার তাবু থেকে গিয়েই জামারাহ তথা শয়তানের প্রতিকৃতিতে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন। কোরবানি করবেন এবং তাওয়াফে জিয়ারাহ, সাফা মারওয়া সাঈ করে আবার মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন। পরের দুই দিনও একইভাবে মিনার তাঁবু থেকে গিয়ে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবেন। ১১ এবং ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ শেষ করে হাজীরা মিনার তাঁবু ত্যাগ করে হজের কর্তব্যের সমাপ্তি ঘটাবেন। এরপর মক্কা ত্যাগ করার আগে বিদায়ী তওয়াফ করে যে যার অবস্থানে চলে যাবেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনই হজ পালনের প্রধান উদ্দেশ্য। হজের প্রতিটি কাজের মধ্যেই আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ, তার মুখাপেক্ষী হওয়া, তার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশিত পথে বাকিজীবন পরিচালনার স্বীকৃতি ও অনুশীলনই প্রকাশ পায়।
এজন্য হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘হজে মাবরুর বা কবুল হওয়া হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ এ জন্য হাজিরা সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন আল্লাহ যেন হজ পালনকে সহজ করে দেন এবং তার হজকে ‘মাবরুর হজ’ হিসেবে কবুল করেন। আমিন।
সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ১০ লাখ মুসলিম হজ পালনে মক্কায় সমবেত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। বাকিরা সৌদি আরবের নাগরিক। মহামারির কারণে দুই বছর সীমিত সংখ্যক লোকের হজ পালনের মাধ্যমে বৃহত্তম হজ অনুষ্ঠানের বিরতির পর এবার ১০ লাখ লোক হজ পালনের সুযোগ পেল।
এর আগে ২০১৯ সালে হজে প্রায় ২৫ লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা এই বার্ষিক হজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ইসলামের অবশ্য পালনীয় পাঁচটি স্তম্ভের একটি অন্যতম ভিত্তি।
এদিকে মক্কায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এ বছর পবিত্র হজ উপলক্ষে মিনায় হজযাত্রীদের সার্বিক সেবার জন্য চারটি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পবিত্র স্থানগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হবে। হজযাত্রীদের জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য বিশেষ চিকিৎসক দল কাজ করছে।
মিনায় এই স্বাস্থ্য সেবার আওতায় যেকোনও জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ১০০টি ছোট অ্যাম্বুলেন্স এবং ৭৫টি বড় অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
হজ শুরুর আগে এরই মধ্যে মদিনায় ৩৭ হাজার হজযাত্রীকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে সেখানকার হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো।
এরমধ্যে রয়েছে ২১টি কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন অপারেশন, ৬৭টি ডায়ালাইসিস সেশন, ৩১ হাজার ২০৫টি টিকাদান, ২৭টি মাঠপর্যায়ে সচেতনতামূলক স্বাস্থ্য সেবা এবং হজযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় ৬৮টি ইলেকট্রনিক সচেতনতা বুলেটিন। সচেতনতামূলক পরিষেবা থেকে এখন পর্যন্ত ৩৮ হাজার হজযাত্রী উপকৃত হয়েছেন। খবর সৌদি গেজেটের।