আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ‘ক্রেতা’ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘নির্মাতা’ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমিতে সোমবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘মিডশিপম্যান-২০১৯ আলফা’ ও ‘ডাইরেক্ট অ্যান্ট্রি অফিসার ২০২১ ব্রাভো ব্যাচ’- এর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্রেতা নৌবাহিনী হতে নির্মাতা নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
তিনি জানান, হেলিকপ্টার এবং এমপিএ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক সব সুবিধা সম্বলিত দ্বিতীয় হ্যাঙ্গারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
‘২০২১ সালের নভেম্বর জার্মানি হতে নতুন একটি এমপিএ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অ্যাভিয়েশন উইংয়ে যুক্ত হয়েছে এবং অপরটি আগামী মে-তে যুক্ত হবে’, বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৭ সালে নৌ বহরে ‘বানৌজা নবযাত্রা’ ও ‘বানৌজা জয়যাত্রা’ নামে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌ বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আমাদের বিশাল সমুদ্রের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি মানব পাচার ও চোরাচালান রোধ, জেলেদের নিরাপত্তা বিধান, বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে নৌবাহিনীকে আরও বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে নৌবাহিনীতে কমিশন পাওয়া নবীন কর্মকর্তাদের সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে সদা প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নেভাল অ্যাকাডেমিতে নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে যোগ দিতে প্রশিক্ষণ শেষ করেছে ৪৪ নবীন কর্মকর্তা।
তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তোমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তোমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলব।
‘সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে তোমাদের সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে।…আমি আশা করব তোমাদের দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা তোমাদের অধীনস্তদেরও একইভাবে দেশের প্রয়োজনে আত্মনিবেদনে অনুপ্রাণিত করবে।’
নৌ বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও আঞ্চলিক শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী। তাই বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নৌ বহরে যুদ্ধজাহাজ সংযোজন এবং বিদ্যমান জাহাজগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট এবং সাবমেরিনসহ আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজিত করেছি।’
বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়াতে ভবিষ্যতে অধিক উন্নত জাহাজ এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজসমূহকে পোতাশ্রয়ে নিরাপদ জেটি সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কক্সবাজারের পেকুয়াতে আধুনিক বেসিন সুবিধা সম্বলিত স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।’
এ ছাড়াও বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলে নৌ বাহিনীর জাহাজের অপারেশানাল ও যোগাযোগ সুবিধা বাড়াতে ‘শের-ই-বাংলা ঘাঁটির’ নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ এবং পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।’
সংকটে দুর্যোগে দেশের প্রয়োজনের নৌবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীসহ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
খুলনা গেজেট/এনএম