আখ মাড়াইয়ের মৌসুম হলেও দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ছয়টি চিনিকলে এবার ছেদ ধরেছে। কেননা সরকারি সিদ্ধান্তে এই চিনিকলগুলো এবার উৎপাদনে যাচ্ছে না। বছরের এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত চরম দুশ্চিন্তায় ফেলেছে দিয়েছে আখচাষী, শ্রমিক ও কর্মচারীদের। তাদের দাবি, চিনি শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলতে এমন সিদ্ধান্ত। এতে, হতাশ আখচাষী ও মিল শ্রমিক কর্মচারীরা। হঠাৎ উৎপাদন বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন মত দিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চিনি আহরণের হার, আখের জমি, মিলের অবস্থা বা দক্ষতা, লোকাসান ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায় চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের মধ্যে অধিকতর বিবেচনায় ৯টি চিনিকলে উৎপাদন পরিচালনা করা হবে এবং অবশিষ্ট ছয়টি মিলে আখ মাড়াই না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আখ মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাবনা সুগার মিল, কুষ্টিয়া সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, শ্যামপুর সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও সেতাবগঞ্জ সুগার মিল।
জানা গেছে, যেসব মিলে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই করা হবে না, সেসব এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহকৃত আখ নিকটস্থ চালু চিনিকলে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। উৎপাদন স্থগিতকৃত মিল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চালুকৃত মিলে সংযুক্ত বা বদলি করে সমন্বয় করা হবে। পরবর্তী মৌসুমে ছয়টি চিনিকলের সঙ্গে ফরিদপুর চিনিকল ও রাজশাহী চিনিকলেও আখ মাড়াই স্থগিত করার পরিকল্পনা গ্রহণে কথা রয়েছে।
কুষ্টিয়া চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক হাসান সাগর বলেন, এ সিদ্ধান্তে আমরা দিশেহারা। আমরা জানতাম আ’লীগ সরকার শিল্প ও কৃষি বান্ধব সরকার। তবে কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল আমাদের বোধগম্য নয়।
পাবনা চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, গতকাল বুধবার গেট মিটিং ডাকা হয়েছে। এই মিটিং থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আখচাষি ফেডারেশনসহ ছয়টি চিনিকলের নেতদের বৃহস্পতিবার ঢাকায় সমবেত হওয়ার কথা রয়েছে। এখন থেকেই বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রসঙ্গত, ছয়টি চিনিকলের বন্ধ হওয়া ঠেকাতে পাঁচ দফা দাবিতে পাবনা সুগার মিলসহ ছয়টি চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশন যৌথভাবে কয়েক দিন ধরে চিনিকল এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এই সিদ্ধান্তের পর আন্দোলন আরও বেগবান হবে বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন।
চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের সচিব আব্দুল ওয়াহাব বলেন, বন্ধ নয় আধুনিকায়নের জন্য ছয়টি চিনিকলে আপাতত হচ্ছে না উৎপাদন। তবে এসময়ে কারো চাকরি যাবে না। যদিও আধুনিকায়ন শেষে কবে থেকে বন্ধ চিনিকলে উৎপাদন শুরু হবে সেবিষয়ে কোন তথ্য মেলেনি।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা জানান, আধুনিকায়নের জন্য চলতি আখমাড়াই মৌসুমে উৎপাদন বন্ধ থাকছে ছয়টি চিনিকলের। এসব মিলের শ্রমিক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা অন্য মিলে কাজ করবেন। তিনি বলেন, চিনিশিল্পকে লোকসানের কবল থেকে রক্ষা করতে এবং এসব মিলকে আধুনিকায়নের জন্য দেশের ছয়টি মিলের আখ মাড়াই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে কোনো শ্রমিক, কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তার চাকরি যাচ্ছে না। আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মিলের শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশপাশের চালু মিলের শূন্য পদে পদায়ন করা হচ্ছে। এখানে কারও চাকরি যাচ্ছে না। মিলগুলো আধুনিকায়ন করতে তিন বছরের মতো সময় লাগবে। বিদেশি বিনিয়োগকারী পাওয়া গেছে। তাদের সহায়তায় মিলগুলোর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট /এমএম