খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই
প্রদীপের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা

‘আট মাস আটকে রেখে ক্রসফায়ার’

গেজেট ডেস্ক

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রদীপ মোট চারটি হত্যা মামলায় আসামি হলেন।

বৃহস্পতিবার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তিনি তাঁর স্বামী আব্দুল জলিলকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন।

শুনানি শেষে আদালত এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না এবং নিহতের ময়নাতদন্ত হয়েছিল কি না, তার প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আগামী ১০ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম।

মামলায় হোয়াইকং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মসিউর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আসামি হিসেবে ওসি প্রদীপ কুমারের নাম রয়েছে দুই নম্বরে। অন্য আসামিরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) সুজিত চন্দ্র দে, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আরিফুর রহমান, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এএসআই রামচন্দ্র দাস, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার আমিনুল হক।

মামলার অভিযোগের ব্যাপারে আইনজীবী বলেন, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আব্দুল জলিলকে কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়া থেকে আটক করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া। পরে হোয়াইকং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মসিউর রহমানের মাধ্যমে তাঁকে টেকনাফ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রসফায়ার থেকে আব্দুল জলিলকে বাঁচাতে ওসি প্রদীপ কুমার দাস মামলার বাদী সানোয়ারা বেগমের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।

স্বামীকে বাঁচাতে সানোয়ারা বেগম তখন পাঁচ লাখ টাকা পুলিশকে দেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন। এতে আরো বলা হয়, টাকা দেওয়ার পর আব্দুল জলিলকে দীর্ঘ আট মাস ওসি প্রদীপ কুমার থানায় আটকে রাখেন। সবশেষ এ বছরের ৭ জুলাই ক্রসফায়ারের নামে আব্দুল জলিলকে হত্যা করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলার আইনজীবী মনিরুল ইসলাম এ সময় আব্দুল জলিলের পাশাপাশি দুটি ছবি গণমাধ্যমের সামনে প্রদর্শন করেন। একটি ছবিতে মনিরুলকে ধরে নেওয়ার সময় স্বাভাবিক চেহারায় দেখা যায়। অপর ছবিটি আট মাস পরের, যখন মনিরুলের চুল-দাড়ি ছিল বেশ লম্বা। আব্দুল জলিল ও সানোয়ারা বেগম দম্পতির একটি শিশু সন্তান রয়েছে। সানোয়ারা আজ সেই শিশুসন্তানকে নিয়েই আদালতে মামলা করতে এসেছিলেন।

এর আগে গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। এটিই ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা।

এরপর গত ১৮ আগস্ট চাহিদামতো ঘুষ দেওয়ার পরও এক ব্যক্তিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ এনে প্রদীপ কুমার দাসসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এই মামলাটি করেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার গুল চেহের। তিনি অভিযোগ করেছেন, পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও তাঁর ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়। এটি ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় হত্যা মামলা। এই মামলায়ও প্রদীপ কুমার দাশ দুই নম্বর আসামি। মামলার ২৮ আসামির ২৭ জনই পুলিশের সদস্য।

গত বুধবার এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার অভিযোগ এনে তাঁর ভাই কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত-৩-এ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরেককটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক চন্দ্রকে প্রধান আসামি করে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এটি ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে তৃতীয় হত্যা মামলা।

এই মামলায় আসামি মোট ২৩ জন। নিহত প্রবাসী মাহমুদুর রহমানের ভাই নুরুল হোসাইন মামলাটি করেন। শুনানি শেষে ওই ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কি না, তা আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত ১২ আগস্ট মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নে ২০১৭ সালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার (৪০) বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে প্রদীপ ছাড়াও আরো পাঁচজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। ঘটনার সময় প্রদীপ কুমার দাশ মহেশখালী থানার ওসি ছিলেন।

পরের দিন অর্থাৎ ১৩ আগস্ট মহেশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। তবে ওই ঘটনায় তিন বছর আগে পুলিশের দায়ের করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!