আজ শনিবার ১০ জিলহজ্ব, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে পূর্ণ ভাবগাম্ভীর্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ্ নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ঈমানের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তার একমাত্র সন্তান শিশু হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নবী ইব্রাহিম (আঃ) সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার স্মরণে এই দিনটি সামার্থ্যবান মুসলিমরা মহান স্রষ্টার নৈকাট্য লাভের উদ্দেশ্যে হালাল পশু কোরবানি করে থাকেন।
শনিবার (১ আগস্ট) সকালে সারাদেশে ঈদের জামাত আদায় করেছে ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশী মুসলিমরা। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যে ঈদের জামাত ও সমগ্র কর্মসুচিতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। মহান স্রষ্টার কাছে ক্ষমা ও তাঁর অনুগ্রহ এবং দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে বৈশ্বিক মহামারী থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হবে সর্বত্র।
খুলনায় ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮টায় টাউন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এবার ঈদের জামাত হবে মসজিদে মসজিদে। ঈদুল-আযহার নামাজের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদের নামাজ আদায় শেষে প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা প্রিয় পশু কোরবানি করবেন।
এদিকে, দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল-আজহা পালনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেই সাথে তাদের সড়ক, নদী ও রেলপথে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ‘ঈদ মোবারক’ লেখা ব্যানারে সজ্জিত করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে জেলা কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, সরকারি শিশু সদনগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো বিশেষ প্রকাশনা ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল-আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীকে দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্দেশে নিজের ছেলে হযরত ইসমাইলকে কুরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহীম আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।’
বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান জাঁকজমকের সাথে পালন করে আসছে। এটা আমাদের সম্প্রীতির এক অনুপম ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে তা কাজে লাগাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, প্রতিবছর এ উৎসব পালনের মধ্যদিয়ে স্বচ্ছল মুসলমানরা কোরবানিকৃত পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে মানুষে-মানুষে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করে।
‘ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল-আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি,’ যোগ করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এআইএন